নেকেই লম্বা সময় ধরে এমন কিছু শারীরিক সমস্যায় ভোগেন, যা হয়তো আংশিকভাবে হলেও জিন বা বংশগতির কারণে হয়ে থাকতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণার ভিত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী পেটের পীড়া (ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম), পেশি ও হাড়ের ব্যথা (মাসকিউলোস্কেলিটাল পেইন), তলপেটের ব্যথা (পেলভিক পেইন) এবং চোখ শুকিয়ে যাওয়া (ড্রাই আই) রোগের মতো স্বাস্থ্য-সমস্যাকে কিছুটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বলে মনে করছেন ব্রিটিশ গবেষকেরা। বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের একটি গবেষক দল আট হাজার জোড়া যমজ ভাইবোনের ওপর এ বিষয়ে পরীক্ষা চালায়। এতে দেখা গেছে, এমন স্বাস্থ্য-সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে একই ডিএনএ-এর ভাগীদার যমজের দুজনের মধ্যেই একই ধরনের ব্যথা দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ-সংক্রান্ত আরও গবেষণার মধ্য দিয়ে হয়তো এই দুরারোগ্য ব্যথা থেকে মুক্তির পথ মিলতে পারে।
এমন স্থায়ী ব্যথার সঙ্গে জিনের সম্পর্ক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা ‘আইডেন্টিকাল’ এবং ‘নন-আইডেন্টিকাল’ যমজদের ওপর যুগপত্ভাবে এ বিষয়ে গবেষণা চালান। কেননা এই দুই ধরনের যমজরা জিনগত উত্তরাধিকার বহনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নমুনা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কারণ ‘আইডেন্টিকাল’ যমজরা একই ডিএনএ-এর ভাগীদার হলেও ‘নন-আইডেন্টিকাল’ যমজরা তা নয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবেশগত প্রভাবকগুলো সক্রিয় থাকলেও এই চার ধরনের স্থায়ী ব্যথা হওয়া বা না-হওয়ার ক্ষেত্রে জিন বা বংশগতির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভূমিকা থাকতে পারে। অবশ্য ঠিক কোন জিনের উত্তরাধিকারের কারণে এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে, তা এখনো নির্দিষ্ট করা যায়নি বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
সাধারণভাবে ‘ক্রনিক পেইন’ হিসেবে চিহ্নিত এ ধরনের সমস্যাগুলো কখনো কখনো মাসব্যাপীও স্থায়ী হতে পারে আবার কিছুদিন পর পর ফিরে আসতে পারে। এই ব্যথার কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায় না বলে এসবের নিরাময়ও কঠিন। এ ধরনের অনেক ব্যথার জন্য অনেক স্বাস্থ্য-সমস্যাও দায়ী হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করেন এসবের সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের একটা যোগ আছে। সুনির্দিষ্ট কোনো টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে থাকলেও মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠাতে না-পারা—এমন ব্যথা স্থায়ী হওয়ার একটা বড় কারণ হতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান ফ্রান্সিস উইলিয়ামস বিবিসিকে বলেছেন, নানা ধরনের স্থায়ী ব্যথার বা ওই ধরনের উপসর্গের সঙ্গে জিনগত এবং পরিবেশগত সম্পর্কের বিষয়ে এ ধরনের গবেষণা খুব বেশি হয়নি। এই গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে এমন স্থায়ী ব্যথা পারিবারিক উত্তরাধিকারের সঙ্গে জড়িত হয়ে থাকতে পারে। আরও গবেষণার মধ্য দিয়ে হয়তো এর নিরাময়ের পথ পাওয়া যেতে পারে এবং লাখো মানুষকে এমন স্থায়ী ব্যথা থেকে আরোগ্যে সহায়তা করা সম্ভব হতে পারে।