অনিশ্চয়তার মুখে জামায়াতের বিচার প্রক্রিয়া

0
95
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা- আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার প্রস্তুতিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ শেষ হলেও অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার শুরু হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

বিচারকদেরই একাংশ, যাদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে বিলম্বের অভিযোগ রয়েছে, তারা বলছেন, “এখনো সঠিক সময় আসেনি।”

জামায়াতের বিচার পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে গঠিত সাত সদস্য বিশিষ্ট বিচারকদের একটি দলকে ১১ মে’র বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারক (সিপি) সৈয়দ হায়দার আলী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রণীত যাবতীয় প্রতিবেদন ও অন্যান্য নথিপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

ওই দলের অন্যতম সদস্য তুরিন আফরোজ নির্দেশের জবাবে হায়দারকে পাঠানো এক চিঠিতে জানান- ওই নথিপত্রগুলো প্রধান বিচারক গোলাম আরিফ টিপুর কার্যালয়ে আছে। কিন্তু যেহেতু তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন তাই এখনই দলিলপত্রগুলো ভারপ্রাপ্ত প্রধানের কাছে পাঠানো তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

গত মাসে টিপু ১৩ মে পর্যন্ত ছুটি নিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে যান। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ টিপুর ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি ফেরত না আসা পর্যন্ত হায়দারের ওপর অর্পণ করার আদেশ দেন।

কিন্তু টিপু যখন গত ৩০ এপ্রিল ফেরত এলেন এবং কাজে যোগদানসংক্রান্ত চিঠিটি সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিলেন, তখনই একটি সমস্যার সূত্রপাত হলো। কিন্তু ওই চিঠিটি এখনো গ্রহণ করা হয়নি এবং হায়দারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিয়োগ করার আদেশটিও এখনো পর্যন্ত বাতিল করা হয়নি।

কয়েকদিন আগে তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলো তারা চলতি মাসের শেষেই আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দিতে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, “যতদিন পর্যন্ত না প্রধান বিচারক তার দায়িত্বে ফিরে আসছেন, ততদিন পর্যন্ত এই মামলা নিয়ে আমাদের দলটি কাজ করবে না… আমি চিঠিতে যা লিখেছি তার বাইরে আমার বলার কিছু নেই। প্রধান বিচারক যে সিদ্ধান্ত নেবেন, দল সেটাই মেনে নেবে।”

এদিকে, এখনই জামায়াতকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে কি-না তা নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার বিচারকদের কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে না পৌঁছেই বৈঠকটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়েছে।

ওই বৈঠকে উপস্থিত মোখলেসুর রহমান বলেন, “ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারক বৈঠকটি মুলতুবি করেছেন। কারণ সাত সদস্যের বিচারক দলের সবাই বৈঠকে উপস্থিত হননি।”

দলটির সদস্যরা হলেন- জিয়াদ আল মালুম, তুরিন আফরোজ, সুলতান মাহমুদ, রানা দাশ গুপ্ত, একেএম সাইফুল ইসলাম, সুলতানা রাজিয়া এবং তাপস কান্তি বাউল।
অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, গতকালের বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ১১ মে’র বৈঠকটিকে অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে একটি সমাধানে আসা।

যে বিচারকরা গতকালের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন তারা জানান, ট্রাইব্যুনালে চলমান অন্যান্য মামলার কাজে ব্যস্ত থাকায় তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের বিচার নিয়ে বিচারক দলের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে বৈঠকটি ডাকা হয়েছিল। এজন্য এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক।

মোখলেসুর বলেন, “এই মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেই এর নথিপত্রগুলো দেখতে চান ভারপ্রাপ্ত প্রধান। নথিপত্রগুলো দেখতে চাওয়ার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্যই নেই।”

কিন্তু একটি সূত্রে জানা গেছে, সাত সদস্য বিশিষ্ট ওই বিচারক দলের অধিকাংশ সদস্যই মনে করেন, এসব কাজের জন্য এখনো সঠিক সময় আসেনি।

‘সঠিক সময়’ বলতে তারা ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন জানতে চাওয়া হলে সূত্র জানায়, বিচারকরা মনে করেন জামায়াতের বিচার করার জন্য হাতে এখনো অনেক সময় পড়ে রয়েছে এবং এখনই জামায়াতের বিচার শুরু করা হলে ট্রাইব্যুনালে চলমান অন্যান্য বিচারপ্রক্রিয়ার কাজে জটিলতা বাড়তে পারে।

কয়েকজন বিচারকের ভাষ্য অনুযায়ী, জামায়াতের বিচারের জন্য গঠিত বিচারক দল অনেক বড় করে গঠন করা হয়েছে বলেই এখন দলের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিচ্ছে।

গত মার্চ মাসে তদন্ত সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরেই জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারক টিপু সাত সদস্য বিশিষ্ট এই দলটি গঠন করেন।

কিছু বিচারক, যারা এখনই বিচারকাজ শুরু করতে চান, তারা জানান- ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারক নথিপত্রগুলো দেখতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি এই মামলাটি অন্য আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সোচ্চার লেখক শাহরিয়ার কবির বলেন, “জামায়াতের বিচার শুরু করার জন্য কোনো সময়ই ভুল সময় নয়। আমরা সবসময়েই বলে এসেছি যে শুরুতেই জামায়াতের বিচার হওয়া দরকার ছিল।”

তিনি আরো বলেন, “যদি কেউ বলেন যে জামায়াতের বিচার করার জন্য এখনো সঠিক সময় আসেনি, তাহলে আমি এটাই বলব যে, তারা জামায়াতের স্বার্থরক্ষায় কাজ করছেন। যত দ্রুত সম্ভব তাদের এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই

শেয়ার করুন