থাইল্যান্ডে সামরিক আইন জারি ব্যাংককে সেনা মোতায়েন

0
117
Print Friendly, PDF & Email

সামরিক আইন জারির পর ব্যাংককের রাস্তায় গতকাল সেনাবাহিনীর টহল : ইন্টারনেট
থাইল্যাল্ডে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পর শান্তি বজায় ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারের জন্য গতকাল মঙ্গলবার সামরিক আইন জারি করা হয়। রাজধানী ব্যাংককে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও রাস্তায় সামরিক বাহিনীকে অস্ত্রসজ্জিত গাড়িতে টহল দিতে দেখা যায়। এ দিকে থাইল্যান্ডে সামরিক আইন জারিতে জাপান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এ ব্যবস্থা অবশ্যই হতে হবে সাময়িক। বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা।
সেনাবাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে এমন ধরনের খবর কিংবা স্থিরচিত্র প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সব সংবাদমাধ্যমকে নির্দেশ দিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল প্রায়ুত চ্যান-ও-চা এক বিবৃতিতে এ নির্দেশ দেন। বিবৃতিটি প্রত্যেকটি চ্যানেল প্রচার করে।
থাইল্যান্ডে ছয় মাসেরও বেশি সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এ সামরিক আইন জারি করা হলো। মঙ্গলবার থাই সেনাবাহিনীর প থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে। এটা কোনো সামরিক অভ্যুত্থান নয়।’
থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের উপায় হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিউয়াত্তামরং বুনসঙপাইসান পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করার পরদিন সেনাবাহিনীর প থেকে এ পদপে নেয়া হলো। সেনাপ্রধান জেনারেল প্রাইউথ চ্যান-ওছা বলেছেন, সহিংস বিােভে জানমালের তি হওয়ায় জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছে সেনাবাহিনী।
গত নভেম্বরে থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী বিােভ শুরু হওয়ার পর থেকে সহিংসতায় প্রায় ৩০ জন নিহত হয়েছে। প্রাইউথ বলেন, ‘সহিংসতায় দেশের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে বলে আমরা উদ্বিগ্ন। তাই দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা সামরিক আইন জারি করেছি।’ চলমান সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে সব পকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি। মতার অপব্যবহারের অভিযোগে গত ৭ মে সাংবিধানিক আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ও তার ৯ মন্ত্রীর পদত্যাগের পর থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়। ইংলাকের পদত্যাগের পর তার স্থলাভিষিক্ত হন বাণিজ্যমন্ত্রী নিউয়াত্তামরং বুনসঙপাইসান। কিন্তু সরকারবিরোধী বিােভকারীরা বলছে, তার কোনো বৈধতা নেই এবং সংস্কারকাজ চালানোর জন্য তারা একটি ‘নিরপে’ সরকার চায়।
বিচারমন্ত্রী চাইকাসেম নিতিসিরি বলেন, ‘সেনাবাহিনী সামরিক আইন জারির বিষয়ে মন্ত্রিসভার সাথে কোনো পরামর্শ করেনি।’ তিনি এ পদক্ষেপের প্রতি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনো দেশের ক্ষমতায় রয়েছে তবে নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনী গ্রহণ করেছে। নিরাপত্তার দায়িত্ব একান্তভাবে সেনাবাহিনীর, পরিস্থিতি খারাপ হবে না শান্ত হবে তা তাদের ওপর নির্ভর করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার সংবাদদাতা স্কট হেইডলার জানান, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সহিংসতা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছে সেনাবাহিনী।’
এ পদক্ষেপ অবশ্যই সাময়িক : যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, থাই সামরিক বাহিনীর সামরিক আইন জারি অবশ্যই সাময়িক এবং এটি কোনোভাবেই গণতন্ত্রের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে না। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেন সাকি এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সঙ্কটের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এবং ‘বাকস্বাধীনতার প্রতি সম্মানসহ গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলতে আমরা সব দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ সাকি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, শান্তি ও আইনের শাসন বজায় রাখতেই রাজকীয় থাই সেনাবাহিনী সে দেশে সামরিক আইন জারি করেছে এবং তা সামরিক অভ্যুত্থান নয়। আমরা আশা করছি, এ েেত্র সামরিক বাহিনী তাদের দেয়া প্রতিশ্র“তি রা করবে। সহিংসতা প্রতিরোধে একটি সামরিক পদেেপর অংশ হিসেবে এটি জারি করা হয়েছে এবং সামরিক বাহিনীর এ পদপে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিগ্রস্ত করবে না।’
জাপানের গভীর উদ্বেগ : থাইল্যান্ডে সামরিক আইন জারির ঘোষণায় জাপান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মঙ্গলবার জাপান সরকারের প্রধান মুখপাত্র ইয়োশিহাইদ সুগা সাংবাদিকদের বলেন, ‘থাইল্যান্ড পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ তিনি বলেন, আমরা আবারো সংশ্লিষ্ট সব পকে সহিংসতা এড়িয়ে সংযমী হওয়ার তীব্র আহ্বান জানাচ্ছি।
সুগা আরো বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করছি সব পরে মধ্যকার মতপার্থক্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে দূর হবে। উল্লেখ্য, জাপান থাইল্যান্ডে অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ। থাইল্যান্ডে জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও সুগা উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন