‘মতের ভিন্নতা থাকলেও ভালোকে সমর্থন করেছি’

0
114
Print Friendly, PDF & Email

হঠাৎ করেই গতকাল সোমবার অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এমকে রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করলেও কেন সরিয়ে দেওয়া হয় তা উল্লেখ করা হয়নি।

শুধু বলা হয়, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে তাকে ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হয়েছে। তবে কেন তাকে অব্যাহতি দেয়া হলো এ প্রশ্ন এখন সবার। কি কারণে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এ আলোচনা এখন আইনজীবীদের মুখে মুখে।

গণমাধ্যমে তার অব্যাহতির কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলেও এমকে রহমান তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘কি কারণে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, তা সরকারই ভাল জানে।’

মঙ্গলবার তার নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এমকে রহমান। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার অব্যাহতির বিষয়ে সরকারই ভাল বলতে পারবে। আমি কিছু জানি না। সরকার মনে করেছে আমার দরকার নেই। ওকে ভাল। আমি স্বাগত জানাই।’

রাষ্ট্রপক্ষের এই প্রসিকিউটর বলেন, ‘পাঁচ বছর এক মাস ২৫ দিন আমি দায়িত্ব পালন করেছি। তাতে আমার জানা মতে, আমি কোনো ভুল করিনি।’

তিনি বলেন, ‘আইনের মধ্যে থেকেই আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ভালকে সমর্থন করি, তাতে মতের ভিন্নতা থাকলেও।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অন্যায় কাজ করিনি। আইনের মধ্যে থেকে কথা বলেছি। মেলাফাইড (অসৎ উদ্দেশ্যে) কিছু বলিনি।’

অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেলের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর এমকে রহমান মঙ্গলবার এটর্নি কার্যালয় ছেড়ে দীর্ঘদিন পর আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত তার চেম্বারে বসেন। এর আগে সকালে তিনি সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে চেম্বারে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন এবং কুশল বিনিময় করেন।

তিনি সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলামের চেম্বারে বসে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। এরপর জেড আই খান পান্না, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সবার সঙ্গে দেখা করেন।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় চাকরিচ্যুত তিন র‌্যাব কর্মকর্তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে গত ১১ মে হাইকোর্টের আদেশের সময় রাষ্ট্রের মুখ্য আইন কর্মকর্তা হিসেবে আপনার কোনো গাফলতি আছে কিনা জানতে চাইলে এমকে রহমান বলেন, ‘রিট আবেদনে গ্রেপ্তারের বিষয় ছিল না। তারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন চেয়েছিলেন। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গ্রেপ্তারের আদেশ দিয়েছেন। এতে আমার কিছুই করার ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘তারপরও এ বিষয়ে আমি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি।’

অব্যাহতিতে তিনি খুশি উল্লেখ করে এমকে রহমান বলেন, ‘সরকার মনে করেছে আমাকে প্রয়োজন নেই তাই অব্যাহতি দিয়েছে, তাতে অখুশি হওয়ার কি আছে? তবে আমি বলতে পারি আমার শেষ দিন পর্যন্ত আমি কোনো ভুল করিনি।’

এটর্নি জেনারেলের অনুপস্থিতিতে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এটর্নি জেনারেল কিংবা ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে এমকে রহমান বলেন, এটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে কাজের বিষয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে। আর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্বের তো কোনো প্রশ্নই আসে না। প্রসিকিউটরদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই।

গত বছর এটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে ৭৬ কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে অব্যাহতির কারণ কিনা প্রশ্নের উত্তরে এমকে রহমান বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ ছিল। তাছাড়া এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে এটর্নি জেনারেল সরাসরি জড়িত ছিলেন। এখানে আমার কোনো সমস্যা ছিল না।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এমকে রহমানকে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পান।

এদিকে, মঙ্গলবার এমকে রহমান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শেয়ার করুন