রক্তে অবস্থিত লোহিত কণিকা নামক এক ধরনের কণিকা থাকে যার পরিমাণ রক্তের উপাদানে সিংহভাগ হওয়ায় রক্ত লোহিত বা লাল রং ধারণ করে। লোহিত কণিকার মধ্যে হিমোগ্লোবিন নামক পদার্থের জন্য এই কণিকার রং লাল হয়। হিমোগ্লোবিন অঙ্েিজনের বাহক হিসেবে কাজ করে। হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে বাতাসে বিদ্যমান অঙ্েিজন ফুসফুস হয়ে রক্তপ্রবাহের দ্বারা শরীরের প্রতিটি কোষে পেঁৗছে যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১৪-১৬ গ্রাম/ডি এল থাকে। যদি কোনো কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে যায় তবে এই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতিকে রক্তশূন্যতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প করে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অঙ্েিজন সরবরাহ নিশ্চিত হয়ে থাকে। যদি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার অর্ধেকে নেমে আসে তবে একই পরিমাণ অঙ্েিজন সরবরাহের জন্য হার্টকে দ্বিগুণ পরিমাণ রক্ত পাম্প করতে হয়। সুতরাং এটা খুবই স্পষ্ট যে, রক্তশূন্যতার ফলে হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের কাজের চাপ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যদি রক্তশূন্যতার মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে আনুপাতিক হারে হার্টের কর্মতৎপরতাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ধীরে ধীরে হার্টের মধ্যকার বিভিন্ন গঠনগত এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন সাধিত হতে থাকে। এ ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে হার্ট প্রয়োজনীয় পরিমাণ অঙ্েিজন সরবরাহে সচেষ্ট হয়ে থাকে। তবে একটা নির্দিষ্ট অবস্থার পরে হার্ট প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত (অঙ্েিজন) সরবরাহে ব্যর্থ হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের ব্যর্থতাকে হার্ট ফেইলুর বলা হয়।
লক্ষণ : রক্তশূন্যতার ফলে হার্ট ফেইলুরের লক্ষণগুলো সময়ের আবর্তে মারাত্দক আকার ধারণ করে এবং অতি জটিল অবস্থায় রোগীর জীবনও বিপন্ন হতে পারে। ক্রমাবনতিশীল লক্ষণগুলোকে এভাবে সাজানো যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হওয়া, কাজকর্মে অনীহা, মাথা হালকা অনুভূত হওয়া লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তবে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিশ্রমে নিঃশ্বাস ঘন হওয়া বা অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি বোধ করা, মাথা ঘুরানো ও বমি বমি ভাব হওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, বুক ধড়ফড় করা, খাবারের প্রতি আসক্তি কমে যাওয়া, শরীর ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করা, হাত-পায়ের তালু সাদা হয়ে যাওয়া, চোখের ভেতর দিকের পর্দার লাল আভা ক্রমে ফ্যাকাশে হওয়া, জিহ্বা মসৃণ হয়ে যাওয়া, জিহ্বার স্বাদ ও অনুভূতির স্বাভাবিকতা নষ্ট, শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া।
কারণ : শরীর থেকে রক্তক্ষরণ – যেমন অতিমাত্রায় ঋতুস্রাব হওয়া, পাইলস থেকে রক্তপাত হওয়া, অনেক দিন যাবৎ আলসারজনিত রোগে ভোগা, বাত বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার জন্য ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ নিয়মিত সেবন করা অথবা হাঁপানির সমস্যার জন্য প্রায় সময়ই স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন করা। রক্ত উৎপাদন কমে যাওয়া : অপুষ্টি, রক্ত রোগ বিশেষ করে ব্লাড ক্যান্সার, কিডনির অসুস্থতা, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি অথবা রেডিওথেরাপির মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা, ডায়াবেটিস, বৃহদান্তের প্রদাহ ইত্যাদি।
করণীয় : খুব সহজেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। কেউ ইচ্ছা করলে নিজেই কোনো ভালো প্যাথলজিক্যাল ল্যাব থেকে ঈইঈ (ঈড়সঢ়ষবঃ ইষড়ড়ফ ঈড়ঁহঃ) অথবা ঞঈ, উঈ, ঐন% অথবা ঐন% টেস্টের মাধ্যমে তা জেনে নিতে পারেন।
ডা. এম শমশের আলী, সিনি. কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ।