চলতি অর্থবছরে (২০১৩-১৪) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপরেই থাকছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (জিডিপি) প্রাথমিক হিসাবে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। এটা অবশ্য সাময়িক হিসাব।
অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই এই প্রাক্কলন আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট দলিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চলতি সপ্তাহেই জিডিপির প্রবৃদ্ধির এই সাময়িক হিসাব প্রাক্কলন করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠাবে বিবিএস। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের (২০১২-১৩) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব চূড়ান্ত করা হবে।
অবশ্য প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন করা হচ্ছে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে৷ তাই জিডিপি গণনার ভিত্তিও সম্প্রসারিত হয়েছে। পাশাপাশি এত দিন ধরে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে প্রবৃদ্ধি নির্ণয়ের ধারারও অবসান ঘটছে৷ তবে তুলনার সুবিধার্থে নতুন ভিত্তিবছরের পাশাপাশি পুরোনো ভিত্তিবছর ধরে জিডিপি ও প্রবৃদ্ধি নির্ণয় করার কথা৷
উল্লেখ্য, গত বছর জুন মাসে বাজেট ঘোষণার সময় চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে এটি যে নতুন ভিত্তিবছরের ওপর নির্ভর করে, তখন তা জানানো হয়নি৷ মূলত গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছরের গণনার হিসাব প্রকাশ করে বিবিএস৷ তখন বিগত পাঁচ বছরের পুরোনো ও নতুন ভিত্তিবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব প্রকাশ করা হয়৷
তাতে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের সাময়িকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। আর নতুন ভিত্তিবছরের ওপর দাঁড়িয়ে তা হয় ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
অন্যদিকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা পুরোনো ভিত্তিবছরের আলোকেই করা হয়েছে৷ বিশ্বব্যাংক বলেছে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। অন্যদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছ। দুই দাতা সংস্থাই মনে করছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগে শ্লথগতির কারণে এ বছরের প্রবৃদ্ধি কমবে।
অবশ্য সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়াটা আসলেই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। বিনিয়োগ ও ভোক্তা চাহিদা হিসাব করে আমার মতে, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে।’ তিনি মনে করেন, ভোক্তা চাহিদা কমেছে এর বড় প্রমাণ হলো, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায় কমেছে। এ ছাড়া প্রবাস আয়েও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। ভোক্তা চাহিদার বড় অংশ পূরণ হয় প্রবাস আয়ে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিবিএসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা অনুযায়ী, ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি থাকবেই। এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হয়নি। আবার প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে বোরো ধানের আবাদও নিম্নমাত্রায় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিবার বাজেট ঘোষণার সময় ওই অর্থবছরের একটি সাময়িক প্রবৃদ্ধির হিসাব দেওয়া হয়। পরের বছর বাজেট ঘোষণার সময় চূড়ান্ত হিসাব দেওয়া হয়।
সেই রীতি অনুসারে গত অর্থবছরের বাজেটের সময় ১৯৯৫-৯৬ ভিত্তিবছর ধরে ২০১২-১৩ অর্থবছরের সাময়িকভাবে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে চূড়ান্ত হিসাব করতে গিয়ে বিবিএস দেখছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ নেমে গেছে। আগামী বাজেটে এই হিসাবটিই চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে নতুন ভিত্তিবছরে এটি কত হচ্ছে, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি৷