নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেন দেশে আছেন, নাকি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে? দীর্ঘ ২১ দিনেও এই ভয়ঙ্কর লোকটির সন্ধান না মেলায় এমন বহু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। অনেকেই বলছেন, নূর হোসেন আছেন খোদ রাজধানীতেই। অনেকের ধারণা, দেশত্যাগ করেছেন স্ত্রী-সন্তানসহ। আবার কেউ বলছেন, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নিরাপদেই দিন কাটছে তার। নূর হোসেনকে দেখা গেছে কলকাতায়- এমন তথ্যও ঘুরছে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। এসব তথ্যের সত্যতাও যেমন খুঁজে পাচ্ছে না, তেমনি সত্য কোনটি তাও বের করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারাও জানে না, নূর হোসেনের সঠিক অবস্থান। তাদের ভাষ্য- রাজধানীতে পাওয়া যায়নি, বিদেশেও পালাতে পারেনি। তাহলে নূর হোসেন কোথায়? র্যাবের দুই কর্মকর্তা গ্রেফতারের পর সব মহলেই এখন এ প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে।
পুলিশ বলছে, এ প্রশ্নের জবাব মেলাতে তারা দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হন্যে হয়ে খুঁজছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। হানা দিয়েছেন নূর হোসেনের পরিচিত মহলেও। কিন্তু পাওয়া যায়নি ট্রাক হেলপার থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মূর্তিমান এই আতঙ্ককে। নিহত স্বজনদের অভিযোগ, অপহরণের দিন ২৭ এপ্রিল নূর হোসেন দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জেই। লাশ উদ্ধারের পর থেকেই হাওয়া! তবে একা নন, স্ত্রী-সন্তান, দেহরক্ষীসহ রাতের আঁধারে ছদ্মবেশে গাঢাকা দেন অপরাধ সাম্রাজ্যের ক্ষমতাধর এই ব্যক্তি। ঘটনার পর পরই স্ত্রী-সন্তানসহ সবার হঠাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন অনেকেই। অভিযোগ উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবহেলার কারণেই তারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এমনকি নূর হোসেনের কাছ থেকে নিয়মিত মাসহারা নেওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
তবে অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার পর থেকে প্রতি রাতেই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতি রাতে দুটি করে টিম অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু নূর হোসেন, তার ক্যাডার বাহিনীর কেউ কিংবা এজাহারভুক্ত আসামিদের কাউকে ধরা যায়নি। অনেকেই বলছেন, নূর হোসেনসহ এজাহারভুক্ত আসামি হাজি ইয়াসিন ও অন্য একজন বিদেশে পালিয়ে গেছেন। নূর হোসেনকে দেখা গেছে কলকাতায় ঘুরে বেড়াতে। তারা কুমিল্লা বা বেনাপোল হয়ে ভারত পাড়ি দিয়েছেন। তবে তাদের বিদেশ চলে যাওয়ার কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে। পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, তারা ইমিগ্রেশনে খোঁজ নিয়েছেন। সেখানে নূর হোসেন, হাজি ইয়াসিনসহ অন্য কারও বৈধ পথে সীমান্ত পার হওয়ার কোনো তথ্য নেই। তবে অবৈধ পথে তারা দেশ ছেড়েছেন কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, অপহরণের পর তিন দিন এলাকায় ছিলেন নূর হোসেন। মোবাইল ফোনের কল ডিটেলস রেকর্ডে (সিডিআর) তার অবস্থান এলাকাতেই দেখা গেছে। এ সময় চারটি মোবাইল ফোন নম্বরের প্রতিটিতে প্রতিদিন শতাধিকবার কথা বলেছেন। কিন্তু যেদিন লাশ উদ্ধার হয় সেদিন থেকেই লাপাত্তা হয়ে যান। শুধু একা নন, সঙ্গে নিয়ে যান স্ত্রী-সন্তানদেরও।গতকাল পর্যন্ত পুলিশ তার কিংবা স্ত্রী-সন্তানদের কারও অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি।