রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বারুইপাড়া প্রশিক্ষিত যুব সমবায় সমিতি লি. নামে ৬টি বড় খাসপুকুর লিজ নিয়ে লিজকৃত টাকা পরিশোধ না করে বছরের পর বছর বীরদপে ভোগদখল করে যাচ্ছে এলাকার প্রভাবশালী নওসাদ। সেচ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। ফলে সরকার প্রতি বছর রাজস্ব হারাচ্ছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং এ পর্যন্ত রাজস্ব হতে বঞ্চিত হয়েছে ২২ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৪ টাকা। যার প্রভাব পড়ছে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে। দেখার যেন কেউ নেই। যারাই রক্ষক তারাই যদি ভক্ষক হয় তবে রাজস্ব আদায় হবে কি করে এমন প্রশ্ন এলাকার জনসাধারণের। জানা গেছে, ২০০৮ সালে বারুইপাড়া প্রশিক্ষিত যুব সমবায় সমিতি লি., গোদাগাড়ীর নামে উপজেলার সাগুয়ান মৌজার জেএল নং ২১৪, ৪ বছরের জন্য ওই সমিতির নামে ৬টি খাসপুকুর লিজ দেয়া হয়। দাগ নং ৩৭৬, খাসপুকুরে জমির পরিমাণ ৬ দশমিক ৬৪ একর, বার্ষিক ইজারামূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার ৬০৮ টাকা, একই মৌজার জে.এল নং-২১৪, দাগ নং ২৯৫, পুকুরে জমির পরিমাণ ৪ দশমিক ২৬ একর, বার্ষিক ইজারামূল্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৪৬ টাকা, একই মৌজা ও জে.এল নং-২১৪, দাগ নং-৩৭৪, পুকুরে জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৯৬ একর, বার্ষিক ইজারা মূল্য ৪০ হাজার ৩৭৬ টাকা, দাগ নং-৩৩৭, পুকুরের পরিমাণ ১ দশমিক ১০ একর, বার্ষিক ইজারা মূল্য ২০ হাজার টাকা। দাগ নং ৪৩১, পুকুরের পরিমাণ ০ দশমিক ৯৯ একর, বার্ষিক ইজারা মূল্য ১৪ হাজার ৯৪৯ টাকা। দাগ নং-২৮৪, পুকুরের পরিমাণ ০ দশমিক ৭১ একর, বার্ষিক ইজারা মূল্য ১০ হাজার টাকা।
৬টি পুকুরে মোট জমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৬৬ একর, বার্ষিক ইজারা মূল্য হয় ৩ লাখ ৮১ হাজার ৩৭৯ টাকা। ৪ বছরে ইজারা মূল্য হয় ১৫ লাখ ২৫ হাজার ৫১৬ টাকা। এ পর্যন্ত রাজস্ব হতে বঞ্চিত হয়েছে ২২ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৪ টাকা। কিন্তু গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসের ২ জন প্রভাবশালী কর্মচারীর যোগসাজশে ইজারা মূল্য পরিশোধ না করে বীর দর্পে পুকুর ভোগদখল করে যাচ্ছে; অথচ কর্তৃপক্ষ লিজকারীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করেননি। টাকা পরিশোধ না করে মাদক সিন্ডিকেট জগতের গডফাদার নওসাদ রহস্যজনক কারণে নামমাত্র সমিতির নামে পুকুরগুলো লিজ নিয়ে কথিত শফিকুল ইসলাম, পিতা-আরসাদ আলী, মাদারপুর মহিশালবাড়ী, গোদাগাড়ী, রাজশাহীকে বাদী করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), রাজশাহীকে বিবাদী করে ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল রাজশাহীর যুগ্ম জেলা জজ ১ম. আদালতে ১টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯০/১২ দায়ের করেন। এ মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, জমির মালিক শ্রী মহন্তন প্রতিদাস। মালিকের খাজনা বকেয়ার দায়ে জমিদার বরাবর ইস্তফা দিলে বাদীর পিতা আরশাদ আলী বাংলা ১৩৪৫ সালে জমিদারের নিটক হতে পত্তন গ্রহণ করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে সিন্ডিকেটের গডফাদাররা গত ২০১৩ ইং সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারক জাফর আহম্মেদের বেঞ্চে ৪ সপ্তাহের জন্য কার্যক্রম স্থগিতাদেশ দেন কিন্তু তারপর ৫০ সপ্তাহ পার হলেও ওই পুকুরগুলো নওসাদ বীর দর্পে ভোগদখল করে যাচ্ছে। বছরের পর বছর পার হলেও গোদাগাড়ী উপজেলা ভূমি অফিস ও খাসপুকুর জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির পুকুরগুলোর পুনরায় লিজ প্রদান ও বকেয়া প্রায় ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বর্তমানে ওই পুকুরের জমিগুলো বাংলাদেশ সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত রয়েছে। ইতোপূর্বে বিগত সরকারের আমলেও ওই পুকুরগুলো লিজ দিয়ে সরকারি কোষাগারে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব জমা হয়েছে। কিন্তু ২০১২ সালে কোনো কারণে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কিংবা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির ওমর ফারুর চৌধুরী এমপির প্রতিনিধি আনারুল হোসেন বিশ্বাস বলেন, যদি আরশাদ আলী নামে পত্তন থাকে তবে তারা কেন সরকারি খাসপুকুুর নিয়মনীতি অনুসারে পুকুর লিজ নিয়ে এক বছর টাকা পরিশোধ করেছিলেন। ওই কালোবাজারি নওসাদ তার ছেলে জাহাঙ্গীর সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য জাল কাগজপত্র তৈরি করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। যার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), রাজশাহী লিজকারিদের বিরুদ্ধে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য সার্টিফিকেট মামলা করতে পারতেন। পুনরায় পুকুরগুলো লিজ প্রদান করতে পারতেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকায় সরকার প্রতি বছর বিপুল অংকের রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকার কৃষক ফরজ্জেন আলী বলেন, নওসাদের দাপটে কৃষক তাদের জমিতে সেচ দিতে পারে না। সেচের অভাবে ফসল নষ্ট হয়। বৃষ্টির পানিতে পুকুর ভর্তি হয় ১৬০ টাকা ঘণ্টা পরিশোধ করে সেচের পানি নিতে হয়। সেচের সুবিধার জন্য মানদীঘি ও কালি দীঘির লিজ বাতিল করা জরুরি প্রয়োজন। গোদাগাড়ী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জানান, রবিউল ইসলাম বলেন, নওসাদ জামায়াতি তার ছেলে মাদক সিন্ডিকেটের গডফাদার ও জমি জালবাজের হোতা মাদক ব্যবসা করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। পুকুরগুলো লিজ নিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তাকে হাত করে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। একই মন্তব্য করেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস। এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, খাসপুকুরগুলো নিয়ে আদালতে মামলা ও কোর্টের ৬ মাসের স্থগিতাদেশ আছে। এ স্থগিতাদেশের সময় শেষ হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। –