রাজধানীতে অবৈধ বাজার বসিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের কোটি টাকার বাণিজ্য!

0
188
Print Friendly, PDF & Email

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে রাজধানীর নয়াবাজার এলাকায় নওয়াব ইউসুফ আলী মার্কেটের ভেতর ও বাইরের খোলা জায়গা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় অবৈধ বাজার বসিয়ে বছরে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আর ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সংস্থার সম্পত্তি বিভাগের কয়েক কর্মচারী কোনো নীতিমালা অনুসরণ না করেই বিনা রসিদে (মেমো) দোকান প্রতি সাতশ’ টাকা আদায় করছে। এভাবে ওই বাজারের মাছ, মাংস ও সবজি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বছরে পাঁচ কোটি চার লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এদিকে এসব দোকান থেকে উচ্চ হারে ভাড়া আদায় করায় বিক্রেতারা সব ধরনের পণ্য অধিক দামে বিক্রি করায় স্থানীয় ক্রেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, নয়াবাজার ইউসুফ আলী মার্কেটের প্রবেশপথে খোলা জায়গায় বসেছেন ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরা, যা ক্রেতাদের মার্কেটে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া মার্কেটের মধ্যভাগ শুঁটকি মাছ ও মুরগি ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে। পূর্ব-উত্তরদিকে চাল, পান দোকানিদের দখলে। পশ্চিম পাশে মার্কেটের অর্ধেক জুড়ে মাংসের দোকান থাকায় এখানে কোনো ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে পারছেন না। এভাবে অবৈধভাবে বসানো বাজারটিতে দুই শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকান প্রতি দৈনিক সাতশ’ টাকা করে ভাড়া (টোল) আদায় করা হলে দুইশ’ দোকান থেকে মাসে ৪২ লাখ টাকা আদায় করা হয়। যা বছরে দাঁড়ায় পাঁচ কোটি চার লাখ টাকা। আর কোনো ধরনের রসিদ ছাড়াই হাতে-হাতে এ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারটি ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে গত ১০ ফেব্র“য়ারি সংস্থার কোনো ধরনের নীতিমালা অনুসরণ না করেই এসব দোকান থেকে টোল আদায়ের জন্য সংস্থার সম্পত্তি বিভাগের এমএলএসএস নাসির উদ্দিন ও উচ্ছেদ শ্রমিক ধলু মিয়াকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এমনকি দোকান প্রতি তারা কি পরিমাণ টাকা আদায় করবে সে ব্যাপারেও কোনো গ্রহণযোগ্য তালিকা দেয়া হয়নি। আর নিয়মানুযায়ী ভাড়া (টোল) তালিকা বাজারের দৃশ্যমান স্থানে টানানোর কথা থাকলেও তা টানানো হয়নি। ফলে ভাড়া আদায়কারীরা তাদের ইচ্ছামতো টাকা আদায় করছেন।
বাজারের ব্যবসায়ী মজনু মিয়া, আয়নাল হোসেন, আবদুল মান্নান ও মাসুদ মিয়ার সঙ্গে আলাপ করলে তারা বলেন, অন্যান্য বাজারের থেকে অনেক বেশি ভাড়া দিয়েও আমরা কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে খোলা আকাশের নিচে বসে আমাদের মাছ ও তরিতরকারি বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় চাঁদাবাজ ও লাইনম্যানকে নিয়মিত বখরা দিতে হয়। ফলে দোকান ভাড়া বেশি দেয়ার কারণে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি নিতে হচ্ছে।
ইউসুফ আলী মার্কেটের টোলের হার সম্পর্কে ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, মূল মার্কেটের কাঁচাবাজার অংশে ২০০৯ সালে ব্যবসায়ীদের দৈনিক টোল (ভাড়া) ছিল ৫০ টাকা। এরপর ২০১০-১১ সালে বাড়িয়ে টোলের হার করা হয় ১৫০ টাকা। এভাবে ২০১১-১২ সালে টোল নির্ধারণ করা হয় ২০০ টাকায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে টোলের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬০০ টাকায়। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে টোল করা হয়েছে সাতশ’ টাকা। এছাড়া উল্লিখিত অর্থবছরগুলোর ক্রমানুসারে বাজারের ইজারামূল্য ছিল ৩০ হাজার, ১১ লাখ, ৭৬ লাখ এবং সর্বশেষ ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ওই সময়ে ইজারাদাররা রসিদ দিয়েই টোল উত্তোলন করতেন। কিন্তু গত আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না।
ঢাকা মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শিকদার বলেন, কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই এ বাজারটি দিয়ে কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ডিএসসিসির কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা। ডিএসসিসি বৈধভাবে সহনশীল মানে টোল আদায় করবে, আমরাও দেব, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু টোকেন বা রসিদ ছাড়া কোনো টোল আদায় করা হলে ওই টাকা সরকার পায় না।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল মার্কেটের টোল আদায়ের রেট আমরা দিয়ে দিয়েছি। খোলা বাজারটি ইজারা দেয়া হয়েছে অতীতের নিয়ম অনুসরণ করে।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি মাত্র কয়েক মাস। তাই কত রেট এবং রসিদ দেয়া হয় কিনা সে ব্যাপারে আমি এখন অবগত নই।’ এরপর সম্পত্তি বিভাগের একজন সহকারীকে ডেকে তিনি জানতে চান ওই বাজারটির কোনো টোল রেট দেয়া আছে কি না। উত্তরে ওই সহকারী বলেন, অন্যান্য মার্কেট-বাজারের টোল রেট আছে। কিন্তু নয়াবাজার খোলা বাজারটির কোনো টোল রেট নেই।

শেয়ার করুন