প্রতিনিধি নওগাঁ: নওগাঁর তিন উপজেলায় ৬ দিনে তিনটি মন্ডপে প্রতিমা ভাংচুর ও অগি্ন সংযোগ করেছে সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ ও দুবর্ৃত্তরা৷ পৃথক এ তিনটি ঘটনায় নাম উলেস্নখ করে থানায় মামলা ও জিডি দায়ের করা হলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি৷ পুলিশের চোখে আসামীরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে৷ এদিকে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার না করার হিন্দু সমপ্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন সত্মরের নেতৃবৃন্দরা৷
আত্রাই থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে (১মে) আত্রাই উপজেলার নৈদিঘী গ্রামে শিব মন্দিরের একটি শিব মূর্তির মাথা কেটে গ্রামের একটি খেলার মাঠে ফেলে রেখে যায় দুবর্ৃত্তরা৷ এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়৷ বিষয়টি তদনত্ম চলছে৷ জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷
নিয়ামতপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের একটি শ্মশানের সম্পত্তির দখল নিতে গত মঙ্গলবার রাতে জেলার নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বজলুর রহমান নঈমের নেতৃত্বে ১৮-২০টি মোটরসাইকেলসহ অর্ধশতাধিক ক্যাডার বাহিনী লাঠিসোটা নিয়ে শিবমূর্তি ভাঙ্চুর ও মন্দিরে অগি্ন সংযোগ করা হয়৷ এ ঘটনায় বুধবার দুপূরে থানায় বজলুর রহমান নঈমসহ ১২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন শ্মশান শিবমন্দিরের সেবায়েত লাল বাহাদুর শীল৷
নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওবাইদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে করে বলেন, মামলার আসামীরা পলাতক থাকায় এখন পর্যনত্ম কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি৷ তবে গ্রেফতার করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যহত আছে৷
অপরদিকে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার রজপুর গ্রামের অজয়পুর মাঠে মঙ্গলবার দিন দুপূরে জোর করে একটি মন্ডপের সন্যাস(শিব) মূর্তি পুড়িয়ে দিলেন স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান ও এক আওয়ামীলীগ নেতার ছোট ভাই আব্দুল হামিদসহ (৪৬) এলাকার এক চোর হিসাবে খ্যাত আফজাল হোসেন(৪৪)৷ এ ঘটনায় বুধবার বিকালে আব্দুল হামিদ ও আফজাল হোসেনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ আব্দুল হামিদ পাতনা গ্রামের মৃত ইনছের আলী ছেলে৷
জানা গেছে, ভীমপুর ইউনিয়নের রজপুর গ্রামের হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজন গ্রামের পাশ্বর্ে অজয়পুর মাঠে একটি উঁচু জমিতে একটি মন্ডপ স্থাপন করে দীর্ঘ দিন থেকে বৈশাখ মাসের শেষ পূর্ণমায় সন্যাস (শিব) পূজা করে আসছিলেন৷ মঙ্গলবার দুপূরে স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান ও ভীমপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি হাসান আলীর ছোট ভাই আব্দুল হামিদ, এলাকার এক চোর হিসাবে খ্যাত আফজাল হোসেন ও আলাউদ্দিন (৩৯) নামে এক ব্যক্তি ধান কাটা শেষে মন্ডপে থাকা একটি গাছের ছাঁয়া বসেন৷ এ সময় গল্প করার এক পর্যায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এতে বাধা দেয় আলাউদ্দিন৷ এ নিয়ে বাকবিতন্ডা শুরম্ন হয়৷ এ সময় আশে পাশের ধান কাটা লোক নবকুমার, ভবেশ, দুলাল সহ অনেক শ্রমিক জড় হতে লাগলে৷ তাদের বাধা সত্ত্বেও জোর পূর্বক আব্দুল হামিদ ও আফজাল হোসেন প্রতিমায় আগুন লাগিয়ে দিয়ে দ্রম্নত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়৷ এতে প্রতিমাটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷
স্থানীয় ইউপি সদস্য লোকমান হোসেন, মন্দিরের জমিদাতা ও ভীমপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যা মুঞ্জু রানী, কালিপদ সরকার, গ্রামবাসি নবকুমার, ভবেষ চন্দ্র, দিপেন্দ্রনাথ, বিফল কুমার জানান, এ ঘটনা থানায় জানানো হলেও পুলিশ কোন পদৰেপ গ্রহন না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য রাতে গ্রামে মিমাংসার জন্য একটি বৈঠক ডাকা হয়৷ কিন্তু মিমাংসা করা সম্ভব হয়নি৷ অবশেষে রাত ১টার দিকে থানার পুলিশ কর্মকর্তা পরিদর্শণ করেন৷ মহাদেবপুর থানার ওসি এনায়েত উদ্দিন জানান, আব্দুল হামিদ ও আফজাল হোসেন জোর করে আগুন লাগিয়ে দেয়ার সত্যত্বা পাওয়া গেছে৷ এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ মামলার আসামীদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে৷
জেলা বাসদের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল জানান, সামপ্রদায়িকতার সাথে সমঝোতা করে দেশ পরিচালনার কারণে আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে সামপ্রদায়িকতা মাথা তুলেছে৷ নওগাঁ শানত্মিপ্রিয় জেলা হওয়ার পরও পরপর তিনতিনটি ঘটনা ঘটে গেছে৷ কিন্তু প্রশাসনের ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরম্নদ্ধে কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি৷
জেলা সিপিবি’র সভাপতি পদু্যত্ ফৌজদার জানান, জেলার পুলিশ প্রশাসনের উধ্বতন কর্মকর্তা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে ব্যস্থ থাকায় জেলায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটেছে৷ এর আগেও জেলায় এ রকম অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের পৰে থেকে কাউকে গ্রেফতার না করতে পারায় দিনদিন এ ঘটনাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
এদিকে জেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিভাষ মজুমদার গোপাল জানান, বর্তমান সরকার এ সকল বিষয়ে আনত্মরিক থাকলেও জেলার পুলিশ প্রশাসন থেকে তেমন কোন পদৰেপ গ্রহণ করার লৰ দেখা যায়নি৷ যার কারনে দিনদিন এ ঘটনাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এতে জেলার হিন্দু সমপ্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে৷
পুলিশ প্রশাসনের নিরব ভ্থমিকার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পুলিশ সুপার কাইয়ুমুজ্জামান খাঁন জানান, পৃথক স্থানে মূর্তি ভাংচুর ও অগি্ন সংযোগের ঘটনায় তদনত্ম চলছে৷ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরম্নদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশ প্রশাসন বদ্ধ পরিকর৷