টাকা পাচার ও যেনতেনভাবে ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার সুযোগ

0
110
Print Friendly, PDF & Email

টাকা পাচারের অবাধ সুযোগ আর যেনতেনভাবে ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার বিধান রেখে চূড়ান্ত করা হয়েছে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা বিধিমালা। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রণীত বিধিমালাটি ১৭ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী অনুমোদন করেছেন। এখন প্রক্রিয়া শেষে যে কোনো মুহূর্তে তা এসআরও আকারে জারি করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার পেছনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে গমন ঠেকানো এবং বৈদেশিক মুদ্রা দেশে রাখার যুক্তি দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার নামে বাণিজ্যের কারণে সেই উদ্দেশ্য অনেকটাই ভেস্তে যেতে বসেছে। বাংলাদেশে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বৈধ ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়ার পেছনেও বৈদেশিক মুদ্রার বহির্গমন ঠেকানোর বাইরে বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে এদেশের শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ তৈরির কথা বলা হচ্ছে।
ইতিপূর্বে বিধিমালার যে খসড়া করা হয়েছিল, তাতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিদেশী উদ্যোক্তার নিজ দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমতির বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত বিধিমালায় সেই বিধানটি নেই। এছাড়া ক্যাম্পাস অনুমোদনের ক্ষেত্রে মাত্র দুব্যক্তির পরিদর্শনের বিধান করা হয়েছে। এর বাইরে বিদেশী পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুযোগও রাখা হয়নি। ফলে যেনতেনভাবে ক্যাম্পাস অনুমোদনের পথ তৈরির আশংকা রয়েছে। পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুযোগ না রাখায় বিধিমালার প্রকৃত উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বর্তমানে দেশে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান ফি বছর শত শত শিক্ষার্থীকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিচ্ছে। কিন্তু তা সরকারের স্বীকৃতি পাচ্ছে কমই। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণাও করছে। সম্প্রতি চ্যাঞ্চিরি নামে একটি আইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনিভাবে ধরা পড়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের রেহানা আলী নামে এক ছাত্রীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে ২০০৭ সালের মে মাসে সরকার ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়কে অবৈধও ঘোষণা করে। মূলত এভাবে বিদেশী প্রতিষ্ঠান নাম দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে প্রতারণা করে কোটি কোটি হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল। তাদের ধরার জন্যই এ বিধিমালা।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কাজী সালাউদ্দিন আকবর যুগান্তরকে বলেন, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত বিধিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। বর্তমানে এসআরও জারির কাজ চলছে। দু-একদিনের মধ্যেই প্রক্রিয়া শেষ হবে।
বিধিমালার বিভিন্ন দিক : ৯ পৃষ্ঠার বিধিমালায় ২২টি মূল ধারাসহ অর্ধশতাধিক উপধারা রয়েছে। বলা হয়েছে, ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, নার্সিং ও ফার্মাসি শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী কাউন্সিল থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। কার্যক্রম পরিচালনায় ইচ্ছুক বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজ দেশে আইনগতভাবে অনুমোদিত হতে হবে এবং এ ব্যাপারে যথাযথ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল ও বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সত্যায়ন লাগবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসেরও প্রত্যয়ন লাগবে। শাখা ক্যাম্পাস পরিদর্শনে ২ লাখ আর স্টাডি সেন্টারের জন্য ১ লাখ টাকা ফি দিতে হবে। আর শাখা ক্যাম্পাস সাময়িক অনুমতিপত্রের জন্য ১০ লাখ এবং স্টাডি সেন্টারের জন্য ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। শাখা ক্যাম্পাসের জন্য স্থায়ী আমানত হিসেবে ৫ কোটি ও স্টাডি সেন্টারের জন্য ১ কোটি টাকা তফশিলি ব্যাংকে জমা রাখতে হবে, যা ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া তোলা যাবে না। এই তহবিল প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ কাজে ব্যবহৃত হবে।
প্রাথমিকভাবে ৭ বছরের জন্য সাময়িক রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হবে। ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এলাকা থাকতে হবে। স্টাডি সেন্টারের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১০ হাজার বর্গফুট। ১৫শ বর্গফুটের নিজস্ব লাইব্রেরি থাকতে হবে। পূর্ণকালীন শিক্ষক খণ্ডকালীন শিক্ষকের তিনগুণ থাকতে হবে। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিতে হবে।
কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকৌশল বিষয় থাকলে প্রতি ৫ জন ছাত্রের জন্য ১টি কম্পিউটার থাকতে হবে। ক্যাম্পাসের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিনামা ও নিয়োগপত্রের কপি কমিশনে জমা দিতে হবে। শিক্ষার্থী ফি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার মানদণ্ডে হবে। পরীক্ষা মূল্যায়নে কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে নিজ নিজ মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং নীতি অনুসরণ করা যাবে। বিধিমালা লংঘন করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মতোই ৫ বছর কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।
৬০ দিনের মধ্যে বৈধ হতে হবে : নয়া এই বিধিমালায় দেশে বিদ্যমান সব ধরনের বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬০ দিনের মধ্যে বৈধতা নিতে হবে। যারা নতুন করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়, তাদেরও অনুমোদন পাওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে দেশে বিদেশী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬৮টি। ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ৯টি আবেদন জমা পড়েছে।

শেয়ার করুন