অর্থশূন্য হয়ে পড়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। মসজিদ, মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার খাতে কোন টাকা নেই। অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসেই ভাণ্ডার শূন্য। এ সময়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। নবম জাতীয় সংসদের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শাজাহান মিয়া এ টাকা খরচ করেছেন। এদিকে শূন্য ভাণ্ডার নিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন দশম সংসদের ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। মসজিদ, মন্দির সংস্কার খাতে টাকা পেতে এমপিরা চাপ দিচ্ছেন তাকে। এতে বিব্রত মন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি অবগত করেছেন অর্থমন্ত্রীকে। মন্ত্রণালয়ের প্যাডে চিঠি লিখেছেন টাকা চেয়ে। ওই চিঠিতে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর টাকা খরচের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছরের ১২ই জানুয়ারি ধর্মমন্ত্রী হিসেবে পথচলা শুরু করেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। সাধারণত একটি অর্থবছরে মন্ত্রণালয়কে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় এক বছরের জন্য। অথচ ছয় মাস না যেতেই ধর্ম মন্ত্রণালয় ওই টাকা শেষ করেছে। ১০ই এপ্রিল ধর্মমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এ ধরনের চিঠি পেয়ে হতবাক অর্থ মন্ত্রণালয়। সাধারণত একই বছরে এক খাতের জন্য কেউ দু’বার টাকা চেয়ে চিঠি পাঠায় না। অতীতে এ ধরনের নজির নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছর ৯ম সংসদের শেষ বছর হওয়ায় ভাণ্ডার শূন্য করা হয়েছে। বরাদ্দের নামে হয়তো হরিলুট করা হয়েছে। এক বছরের টাকা ছয় মাসে খরচ করায় এ ধরনের সন্দেহ অমূলক নয়। ধর্মমন্ত্রী তার চিঠিতে লিখেছেন, ‘৯ম জাতীয় সংসদের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মহোদয় তার কোটার সমুদয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান করায় মসজিদ সংস্কার/মেরামত খাতে কোন অর্থ অবশিষ্ট নেই। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্বভার গ্রহণপূর্বক কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ১০ম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ এবং বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার জনগণ আমার সঙ্গে দেখা করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করলে মসজিদ সংস্কার/মেরামত খাতে কোন অর্থ না থাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ চলতি অর্থ বছরে পত্যেক এমপির নির্বাচনী এলাকার মজিদের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপিদের জন্য মসজিদের জন্য ৯০ হাজার টাকা এবং হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এদিকে টাকা চেয়ে মন্ত্রীর লেখা চিঠিতে প্রায় একই বরাদ্দ আবারও চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘এমপিদের নির্বাচনী এলাকার মসজিদের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপিদের মসজিদের জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদানের লক্ষ্যে মসজিদ ও মন্দিরের অনুকূলে বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফরম এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হলো।’ চিঠিতে এমপিরা একেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কত টাকা বরাদ্দ দিতে পারবেন তার সীমারেখা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এমপিরা একটি মসজিদে সর্বনিম্ন ১০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং হিন্দু মন্দিরের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০ হাজার সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অনুদান মঞ্জুরের সুপারিশ করতে পারবেন। ধর্মমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।