অধিকাংশ পোশাক কারখানার বৈদ্যুতিক সংযোগের তার ও সার্কিট ব্রেকার নিম্নমানের। ছাদের ওপর থাকা জেনারেটর তড়িঘড়ি করে নিচে নামানো হয়েছে। তবে অনেক কারখানাতেই তা আবার নারী শ্রমিকের শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্রের পাশে স্থাপন করা হয়েছে কোনোরকম দেয়ালঘেরা ছাড়াই। বয়লার যন্ত্র জেনারেটরের মতোই বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।
উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স দেশের ৫০৮টি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে এমন চিত্রই পেয়েছে। ইতিমধ্যে জোটের আওতাধীন ৬২৬ কারখানার ৮০ শতাংশই পরিদর্শন শেষ। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চট্টগ্রামের একটি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিভিউ প্যানেলে আছে আরও পাঁচ কারখানা।
অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওর্য়ার্কার সেফটির ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যালায়েন্সের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইয়ান স্পাউলিং, উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য শ্রমিকনেতা ওয়াজেদুল ইসলাম খান, শুক্কুর মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন খান, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
মেসবাহ রবিন বলেন, ‘কোনো কারখানাতেই ফায়ার ডোর নেই। এ ছাড়া অনেক কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা স্প্রিংকলার ও হাইড্রেন েনই। অন্যান্য ত্রুটি সংশোধনের পাশাপাশি এসব যন্ত্র আমরা সব কারখানায় লাগাতে বলেছি।’
অ্যালায়েন্সের এই কর্মকর্তা বলেন, দেশের ৭৪ শতাংশ ভবনই জাতীয় ভবন বিধিমালা অনুসরণ করে করা হয়নি। এই বিধিমালাই করা হয়েছে ২০০৬ সালে। ফলে সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই পরিদর্শন চলছে। শ্রমিক নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
ইয়ান স্পাউলিং বলেন, ‘কোনো কারখানা বন্ধ হোক, সেটা আমরা চাই না। তবে দেশের পোশাক খাতের মানোন্নয়ন ও শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর। গত নয় মাসে অনেক কারখানার উন্নতি হয়েছে।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইয়ান স্পাউলিং বলেন, ক্রেতারা নিরাপদ কারখানা থেকে পণ্য ক্রয় করতে চায়। তাদের পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শ্রমিকদের জন্য আগামী সপ্তাহে হেল্পলাইন চালু করবে অ্যালায়েন্স। প্রাথমিকভাবে ৫০ কারখানা এবং চলতি বছরের শেষ নাগাদ শতাধিক কারখানায় চালু হবে। আর জুলাইয়ের মধ্যে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে এক লাখ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে চার লাখ ৪০ হাজার শ্রমিকের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
শ্রমিকনেতা ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, কারখানা যদি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে বন্ধ করতে হয়, তবে শ্রমিকদের স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সেটি নজর রাখতে হবে। বর্তমানে অ্যালায়েন্স নিজেদের পরিদর্শন কার্যক্রমে কোনো কারখানা বন্ধ হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ শ্রমিকদের দুই মাসের মজুরি দেয়। তিনি এই ক্ষতিপূরণের হার বৃদ্ধির দাবি করেন।
আরেক শ্রমিকনেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হয়েছে। আরও কারখানা বন্ধের আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে ১০ হাজার শ্রমিক বেকার। অ্যাকর্ডের পরিদর্শনে কোনো কারখানা বন্ধ হলে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। শিগগিরই এ বিষয়ে সুরাহা না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দেন এই নেতা।
এ বিষয়ে মেসবাহ রবিন বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় আছে। তবে মালিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তবেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।’ আর স্থায়ীভাবে বন্ধ কারখানার ক্ষেত্রে শ্রম আইন অনুযায়ী মালিকপক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।