বিড়ি শিল্প গত আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিল্প। কিন্তু সরকারের শুল্ক বৈষম্যের কারণে সেই বিড়ি শিল্প আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এরইমধ্যে কয়েকটি স্থানে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে লালমনিরহাটে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পাঁচ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
জানা যায়, উৎপাদন প্রতিদিনই অস্বাভাবিক হারে কমছে। ভারসাম্যহীন কর কাঠামোর কারণেই বিড়ি শিল্পের এ বেহাল অবস্থা বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা।
এদিকে বেকার হওয়ার আশঙ্কায় অনেক বিড়ি শ্রমিক ইতিমধ্যেই কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী বিড়ি কারখানার বেশির ভাগই নদী ভাঙ্গন কবলিত দারিদ্র পীড়িত অঞ্চলের। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক গরীব, অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী।
জানা গেছে, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়েনি বরং কমেছে দ্বিগুন হারে। উদ্যোক্তারা বলছেন, বিড়ির বাজার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসায় ভর্তুকি দিয়ে আর কারখানা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এ কারণে কারখানা বন্ধের মতো কঠিন সিন্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
সামগ্রিকভাবে ধুমপায়ীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিড়ি কারখানা। এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাটের শ্রমিক নেতা আজিজার রহমান ও পনির উদ্দিন জানান, কম দামী সিগারেট এখন বিড়ির বাজার দখল করে নিচ্ছে। এ কারণে মালিকরা একের পর এক বিড়ি কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। আর এ অবস্থায় বিড়ি শিল্পকে রক্ষা ও শ্রমিকদের রুজি- রুটির স্বার্থে এ শিল্পের উপর থেকে শুল্ক কমানোর দাবি জানান তারা।
আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ীতে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কর্মরত আলেয়া, মরিয়ম এবং কুদ্দুস মিয়া জানান, বেকার হওয়ার আশঙ্কা ও চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। এ শিল্পের প্রতি সরকার যদি নজর না দেয় তা হলে আমাদের বেকার হয়ে পথে বসতে হবে।
আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরির ম্যানেজার একরামুল হক জানান, বিড়ি শিল্প এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। কারখানা বন্ধ হলে মালিকের কিছুই হবে না, কিন্তু মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হবে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিকরা।
বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এমপয়মেন্ট মনিটরিং (সেম) গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধুমপান নিরুৎসাহিত করার কথা বলে প্রত্যেক বাজেটে বিড়ির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
২০০১ সালে প্রতি হাজার বিড়ির বিপরীতে কর বা শুল্ক ছিল ৩০.৯০ টাকা যা ২০১০ সালে বেড়ে দাড়ায় ৫০.৮৮ টাকায়। এভাবে কর বৃদ্ধির ফলে বিড়ির দাম বেড়ে প্রায় সিগারেটের সমপর্যায় পৌঁছে গেছে।
ফলে বিড়ি ক্রেতাদের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে কমদামী সিগারেটের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাই বিড়ি শিল্পকে কুটির শিল্পের আওতায় রেখে দরিদ্র মানুষের উপযোগী রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।