র্যাব ১১-এর চাকরিচ্যুত অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ ও ডিএডি শাহজাহান আলী হিরু-হুমায়ুনকে অপহরণের পর গুম করেছে বলে দুই পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। তাদের অভিযোগ ওই দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কারা এর সঙ্গে জড়িত, কোথায় গুম করেছে- সব রহস্য বের হয়ে আসবে। গত ৬ মাস ধরে অপহরণের পর হিরু-হুমায়ুন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠছে লাকসামের সর্বস্তরের জনগণ।
লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরু ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ। গত বছর ২৭শে নভেম্বর দলীয় নেতাকর্মীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে কুমিল্লা হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে আলীশ্বর এলাকার জয়নগর স্থানে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় সাদা পোশাকে ও র্যাবের পোশাক পরা সদস্যরা। এ অভিযোগ করেন অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার সাদেক। ব্যারিকেড দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি থামানো হয়। গাড়ি থেকে ড্রাইভার সাদেককে নামিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে র্যাব সদস্যরা। এরপর গাড়ি থেকে সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ ও অপর বিএনপি নেতা জসিমকে নামায়। এর আগে র্যাবের ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি লি. ২-এর উপ-পরিচালক ডিএডি (শাহজাহান ব্যাচ নং ৬০৯৩) হিরুর ফ্লাওয়ার মিলে ঘেরাও করে এক্সিম ব্যাংকের ম্যানেজারসহ ৯ জনকে আটক করে এবং ফ্লাওয়ার মিল থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যায়। ব্যাংক ম্যানেজারসহ ৯ জনকে লাকসাম থানায় হস্তান্তর করলেও টাকা জমা দেয়নি। কুমিল্লা পদুয়া বাজার হিরু-হুমায়ুনের সঙ্গে জসিমকে অন্য একটি গাড়িতে তুলে ডিএডি শাহজাহান লাকসাম থানায় হস্তান্তর করে। র্যাব ১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ কুমিল্লা এসে এর নেতৃত্ব দেন বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন। দুই পরিবারের সদস্যরা র্যাব কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের কথা তারা অস্বীকার করেন। র্যাব-১১ সদর দপ্তর নারায়ণগঞ্জ। এর আওতায় কুমিল্লা অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘ ৬ মাস পর্যন্ত শীর্ষ এ দুই নেতা অপহরণের পর কোন খোঁজ নেই। অপহরণের পর পরিবারের সদস্যরা লাকসাম থানায় র্যাবকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করলেও তখনকার সময় ওসি মামলাটি নেয়নি। র্যাবের নাম বাদ দিয়ে থানা শুধু একটি জিডি নেয়।
হিরুর স্ত্রী ফরিদা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন আমার স্বামী র্যাবের সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মাহমুদ অপহরণ করে গুম করেছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে ডিএডি শাহজাহান আলী। তাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। আমার স্বামীকে জীবিত চাই। যদি মেরে ফেলে তার লাশ চাই।
হুমায়ুনের মা রাবিয়া বেগম বলেন, বাবা কত লোকের কাছে গেছি আমার আদরের সন্তানকে ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য এমপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। কেউ আমার সন্তানের খোঁজ দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী একজন মহিলা- ওনার নিকট আকুল আবেদন, আমার সন্তানের খোঁজ দিন।
হুমায়ুনের ছোট মেয়ে মাঈশা জানায়, আমার বাবার পথ চেয়ে বসে থাকি। কখন যে আব্বু আসবে কিন্তু আসে না। আমার আব্বুকে জীবিত অবস্থায় ফেরত চাই।
হুমায়ুনের পিতা আলহাজ রঙ্গু মিয়া জানান, আমার সন্তানকে জীবিত অবস্থায় ফেরত চাই। যদি আমার সন্তানকে গুম করা হয়ে থাকে তাহলে র্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ ও ডিএডি শাহজাহানের বিচার চাই।