বিপুল সংখ্যক গাড়ি অভিযানের আওতার বাইরে থাকায় এ অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছে দেশে বিল্ট-ইন গাড়ির সংখ্যা কমপক্ষে ৮০ হাজার। অথচ রাজধানীতে দুই দিনের অভিযানে ব্যবস্থা নেয়া কালোগ্লাস গাড়ির সংখ্যা দুই হাজারও হবে না। এ ছাড়া সরকারী গাড়িও এ অভিযানের আওতার বাইরে থাকছে। এ অবস্থায় বিপুলসংখ্যক গাড়ি বাইরে থেকে যাওয়ায় মূলত এটা অর্থহীন অভিযানে পরিণত হয়েছে। তবে এসব বিতর্ক এড়াতে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের গাড়ির গ্লাস থেকে কালো আবরণ খুলে ফেলা হয়েছে। রাতে তিনি জনকণ্ঠকে বলেছেন, শুধু আমার গাড়িই নয়-আইজিপির গাড়িরও কালো আবরণ খুলে ফেলা হয়েছে। সরকারের অন্য মন্ত্রী ও কর্মকর্তারাও এ আইন অনুসরণ করছেন। দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযানে ধরা পড়েছে আরও ১০৭টি গাড়ি। মামলা হয়েছে ৭৭২টি। এ অভিযানের সার্থকতা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ীই পুলিশ কাজ করছে। সেক্ষেত্রে কিছু বিল্ট-ইন গাড়ি এ অভিযানের বাইরে থেকে যাওয়ার মানে এই নয় যে- এটা ব্যর্থ অভিযান।
এ ব্যাপারে র্যাব পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান জানান- র্যাব যেসব গাড়িতে কালো আবরণ ব্যবহার করে আসছিল-সেগুলো খুলে ফেলা হয়েছে। এখন আর র্যাব কোন কালো আবরণের গাড়ি ব্যবহার করছে না। প্রজ্ঞাপন জারির পর ১০ মের মধ্যেই র্যাব তা মেনে নিয়ে বাস্তবায়ন করেছে।
এ ব্যাপারে বারবিডার নেতৃবৃন্দের অভিযোগ- এ অভিযান নগরবাসীর মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিল্ট-ইন গাড়ির ছাড়াও যাঁরা কালো আবরণ লাগিয়েছেন-তারাই কেন এর মাশুল দেবে। বিল্ট্-ইন গাড়ির মালিকরা তো ঠিকই রাজপথে বুক ফুলিয়ে হাকাচ্ছে। যে লক্ষ্য নিয়ে এ অভিযান চালানো হচ্ছে সেটা কি দূর হবে। বিল্ট্-ইন গাড়ি কি অপহরণের মতো অপরাধে ব্যবহৃত হতে পারে না?
তবে পুলিশের এমন অভিযানে বদলে গেছে চিরাচরিত রাজধানীর যানজটের চিত্র। বিভিন্ন রুটের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই কর্মব্যস্ত একটি দিন। সকাল থেকেই রাজধানীর কোন রুটে তেমন যানজটের চিত্র চোখে পড়েনি। এমনকি কোন কোন রুটে কয়েকটি গণপরিবহন ছাড়া ব্যক্তিগত কোন গাড়ির দেখাও মেলেনি।
সরজমিনে দেখা যায়- কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ফার্মগেট, বিজয় সরণি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, শান্তিনগর, পল্টন মোড়, মুগদা, মতিঝিল ও কমলাপুরসহ বিভিন্ন রুটে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত এ চিত্র দেখা গেছে। অবশ্য অভিযান শুরুর প্রথমদিন রোববার সকাল ১০টার পর থেকেই এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। এদিন বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত স্পষ্ট ছিল এ দৃশ্য। তবে সন্ধ্যার পর যানজটের চিত্র ফের আগের অবস্থানে চলে যায়। বিভিন্ন রুটে বেড়ে যায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। এতে কিছু রুটে যানজটও বেধে যায়। পুলিশ জানাায় ব্যক্তিগত গাড়ির স্বল্পতার কারণে রাজধানীতে যানজট অনেকটাই কমে গেছে। ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ইকবাল হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দ্বিতীয়দিনের মতো অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কালোগ্লাসের গাড়ি দেখলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জয়দেব ভদ্র বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। কালোগ্লাসধারী কিছু গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রাজধানীর চিরাচরিত যানজট না দেখে সন্তোষ প্রকাশ করতে গেছে অফিসমুখী সাধারণ মানুষকে। ব্যাংক কর্মকর্তা আমানুল বলেন, সকালে বাসা থেকে বাহির হয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম, রাস্তায় অন্যদিনের তুলনায় পরিবহনের সংখ্যা অনেক কম দেখে। তবে গাড়িতে উঠে অনেক অল্প সময়ে অফিসে চলে এসেছি। অন্যদিন যেখানে অফিস আসতে ৫ থেকে ১০ মিনিট দেরি হয়, সেখানে আজ ২০ মিনিট আগে চলে এসেছি।
বিমাকর্মী ফারজানা বলেন, অফিসে আসতে প্রতিদিন বাসের মধ্যে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এর পর অফিসে এসে মনোযোগ সহকারে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আজ অফিসে আসার পথে কোথায়ও গাড়ি যানজটে পড়েনি। ফলে অফিস খোলার আগেই অফিসে চলে এসেছি।
রামপুরা এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্ট এনামুল হক বলেন, আমরা সকাল থেকেই দ্বিতীয়দিনের মতো কালোগ্লাসধারী গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। তবে প্রথমদিনের তুলনায় আজ এসব গাড়ি কম দেখা যাচ্ছে। তার পরও কালোগ্লাসের গাড়ি দেখামাত্রই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। অপর ট্রাফিক সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম বলেন, কালোগ্লাসের গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলার কারণে বিভিন্ন রুটে গণপরিবহনের সংখ্যাও কমে গেছে। এ কারণেই যানজট কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে।
আজমল, আমিনুল, হাসান ও সোহেল রানাসহ একাধিক লোকাল পরিবহনের চালক জানান, ট্রাফিক পুলিশের অভিযান শুধু কালোগ্লাসের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে না। যাত্রীবাহী পরিবহনেও চলছে তাদের এ অভিযান। অন্যদিনের তুলনায় রবিবার ছিল বেশি। সোমবার সকালেও তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে রাস্তায় একদিকে ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ কমেছে। যাত্রীবাহী পরিবহনেরও সংখ্যা কমেছে। ফলে কমেছে যানজটও। রাতেও নগরীর কয়েকটি স্থানে কালো গাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। শাহবাগের মোড়ে কয়েকটি কালো আবরণের গাড়িকে ঘিরে পুলিশ ও দর্শকের জটলা দেখা যায়। পিজি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের গাড়ি আটক করার সময় পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ হয়।