একজন ফুটবল কোচের চেহারা মনে করুন তো? চোখে নিশ্চিত ভেসে উঠবে ভিসেন্তে দেল বস্ক, লুইস ফেলিপে স্কলারির মতো সফেদ সাদা কেশ, পুরু গোঁফ, বিরাট কপালের অধিকারী প্রফেসরসুলভ চেহারার কেউ। কিংবা এমন কেউই নন, থাকবেন পছন্দের অন্য কেউ। আর যা-ই হোক, হেলেনা কস্তার নাম আপনার দৃশ্যকল্পে ঠাঁই পাবে না! এই তো, ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল! ভাবছেন, হেলেনা কস্তাটা আবার কে!
নারী ফুটবল দল আছে, আছে সে দলের নারী কোচ। এমনকি নারী রেফারিও। কিন্তু পুরুষ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন এমন নারী কি আছেন? এ শূন্যতাও পূরণ হলো। পর্তুগালের হেলেনা কস্তাকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিভাগের দল ক্লারমন্ট।
ইউরোপের অনেক ফুটবল ক্লাবের কোচিং স্টাফে নারী আছেন। কিন্তু ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি ফুটবলপাগল দেশের কোনো পুরুষ দলের প্রধান কোচ হিসেবে নারীর নিয়োগ এই প্রথম। কস্তার জন্য কোচ হওয়া নতুন নয়। এর আগে কাতার ও ইরানের নারী দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। কাজ করেছেন সেল্টিকে। এ ছাড়া বেনফিকা ও চেলসিতেও কাজ করেছেন হোসে মরিনহোর সঙ্গে। তবে একটি পুরুষ দলের প্রধান কোচ হওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর জন্যও আনকোরা।
ফরাসি ক্লাবটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এর (কস্তার নিয়োগ) মাধ্যমে ক্লাব নতুন যুগে প্রবেশ করবে।’ এ দায়িত্ব পাওয়ার পর রীতিমতো স্তুতিবন্যায় ভাসছেন কস্তা। আর্সেনাল কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার বলেছেন, ‘ভালো লেগেছে। নারীদের কোচ যদি পুরুষ হয়, তবে পুরুষদের জন্য নারী নয় কেন?’ যৌক্তিক কথা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীরা বহু আগ থেকেই ছেলেদের পড়াচ্ছেন। যোগ্যতা থাকলে খেলাধুলায় শিক্ষকের ভূমিকায় নারীদের অবতীর্ণ হতে বাধা কোথায়? গানারদের গুরু তা-ই বললেন, ‘যদি উপযুক্ত হন, যেকোনো জায়গায় আপনি চাকরি পাবেন।’কোচ হয়েই ইতিহাসে ঠাঁই নিলেন হেলেনা কস্তা। এখন মাঠে দেখানোর পালা।
কস্তা সম্পর্কে ওয়েঙ্গারের মূল্যায়ন, ‘যদি অভিজ্ঞতার দিকে তাকান, একটিই সীমাবদ্ধতা, তাঁর কোচ (প্রধান) হিসেবে অভিজ্ঞতা কম। তবে হয়তো তার অন্য যোগ্যতা উঁচুমানের। সে এর প্রতিফলন দেখাবে। এটি খুবই ভালো যে, ছেলেদের শেখানোর সুযোগ পেয়েছে একটি মেয়ে।’
কস্তার নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার, উয়েফা সভাপতি মিশেল প্লাতিনি। উয়েফা সভাপতি বললেন, ‘নারীদের স্বপ্ন পূরণে এ খবর উত্সাহিত করবে।’ কথা হলো, যাঁদের গুরু হতে যাচ্ছেন, সেই ক্লারমন্টের খেলোয়াড়েরা কী ভাবছেন কস্তাকে নিয়ে? ক্লারমন্ট স্ট্রাইকার রেমি ডুগিমন্ট বলেলেন, ‘এটা বিরাট চমক। কারণ অনেক নামই শোনা যাচ্ছিল। যাঁদের কম-বেশি সবাই ফাঁকাই ছিলেন। এটি ভালো। তবে নানা গুঞ্জন তৈরি করবে। দারুণ এক অভিজ্ঞতা হবে আমাদের।’
ছেলেদের কোচিং করাতে কস্তা বড় কোনো সমস্যায় পড়বে বলে মনে করেন না ডুগিমন্ট। বললেন, ‘প্রথমে একটু অদ্ভুত হবে হয়তো। জানি না কী ঘটবে। যদি ক্লাব সভাপতি তাঁকে এনে থাকেন, তবে আশা করি সব ঠিকঠাক চলবে। কোনো সমস্যা হবে না।’
মরিনহোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতায় কিনা ৩৬ বছর বয়সী এ নারী কোচের কোচিং দর্শনে নাকি মরিনহোর সঙ্গে অনেক মিল! তাহলে তো ভালোই। সাফল্য হাতের মুঠোয় ধরা দিলে কস্তা কি বলবেন, ‘আই অ্যাম এনাদার স্পেশাল ওয়ান’? সেটি শুনতে একটু অপেক্ষা তো করতেই হয়। তবে ওতটা তর সইছে না অনেকের। কেউ কেউ এরই মধ্যে তাঁকে ‘স্কার্ট পরা মরিনহো’ বলতে শুরু করেই দিয়েছেন!