স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৪৩ বছরঃ দুর্বল স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা

0
361
Print Friendly, PDF & Email

দেশ ৪৩ বছর স্বাধীনতা লাভ করলেও এখনো এদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত লাভ করেনি। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন না করা গেলে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত সম্ভবনা।
বর্তমানে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত । বলা যায় এখানকার শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের ছায়া রয়েছে । কিন্তু স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞগণদের মতে ইংল্যান্ডকে অনুকরণ করা যেতে পারে, অনুসরণ নয় । ইংল্যান্ড প্রথা ও ঐতিহ্যের দেশ হওয়ায় সেখানকার মানুষ অনেকটা ব্যক্তিসতন্ত্র। ইংল্যান্ড কখনো পরাধীন হয়নি । ফলে সেখানকার নাগরিকরা সকলেই নিজেকে সরকারের অংশ মনে করেন। বাংলাদেশে সংবিধান প্রণেতারা বাংলাদেশের জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনায় না নিয়ে অনেকটা ইংল্যান্ডকে অনুসরণ করে শাসনতন্ত্র পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে অনেকে প্রায় জোর করে স্থানীয় শাসনের পরিবর্তে ‘স্থানীয় সরকার’ বাক্যটি ব্যবহার করছেন । শাসনের স্থলে ‘সরকার’ শব্দটি প্রতিস্থাপন হলেও দুই প্রকারের সরকার ব্যবস্থা এসে যায় । তাহলো-কেন্দ্রীয়/জাতীয় সরকার ব্যবস্থা আর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। তাছাড়া স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের সত্যিকারের কোনো স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নেই। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন প্রভৃতি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো ও স্থানীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব হচ্ছেনা। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম ছাড়া এসব প্রতিষ্টানের আর কোনো কাজ থাকে না। তাই গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার মাধ্যমে একটি উন্নত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য গ্রামীণ তৃণমূল, নগরীয় তৃণমূল ও গ্রামীণ-নগরীয় তৃণমূল পর্যায়ে বেশ ক্ষমতাবান ও শক্তিশালী করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল প্রভৃতি দেশে প্রাদেশিক ব্যবস্থা থাকলেও প্রদেশের কাজ করার জন্য সর্বোচ্চ স্তর হিসাবে বিভাগ কিংবা জেলাকে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিটি স্থানীয় ইউনিটে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক সরকার কাঠামো প্রতিস্থাপন করতে হবে । সেই সাথে এসব প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিকতা, ধারাবহিকতা, স্থায়ীত্বশীলতা, গতিশীলতা, কার্যকারীতা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা সব সময় বজায় রাখতে সময়োপযোগী পদ্ধতি আনতে হবে। বাংলাদেশে তিন প্রকারের স্থানীয় সরকার থাকতে পারে।(১) গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় সরকার, (২)নগরীয় স্থানীয় সরকার ও (৩)গ্রামীণ স্থানীয় সরকার। দেশের ৪৮৩ টি উপজেলার মধ্যে বেশির ভাগ উপজেলা নগরীয় ও স্থানীয় এলাকা নিয়ে গঠিত এবং বাকি উপজেলাগুলো গ্রামীণ এলাকা নিয়ে গঠিত । অন্যদিকে ইউনিয়নগুলি শুধু গ্রামীণ এলাকা নিয়ে গঠিত। আর আইন অনুযায়ী ঘোষিত ৩১৫ টি পৌরসভা ও পৌরকর্পোরেশন নগরীয় এলাকা নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি লোক নগরে বসবাস করে। ২০২০ সাল নাগাদ দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠি অর্থাৎ ৮.৫ কোটি লোকনগরে বসবাস করবে আর ২০৫০ সালে বাংলাদেশের শতভাগ অর্থাৎ ২৭ কোটি লোক নগরে বসবাস করবে। তখন দেশে গ্রাম বলে কিছু থাকবে না। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের জনসংখ্যা ও আয়তন ক্রমাগতভাবে কমতে থাকবে এবং সমগ্র দেশটি অনেকগুলো নগরে বিভক্ত হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের এই দুর্বল স্থানীয় সরকার বাবস্থাকে সত্যিকারের স্থানীয় সরকার বাবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় সরকারের সকল স্তরে নির্বাচিত, দায়বদ্ধ, জবাবদিহিমূলক, শক্তিশালী, গণতান্ত্রিক, গতিশীল ও স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন