তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানই সমাধান

0
122
Print Friendly, PDF & Email

গুম, খুন অপহরণের মতো স্পর্শকাতর একটির পর একটি ঘটনার অবতারণা করে জাতির দৃষ্টিকে সেদিকে ফিরিয়ে রাখলেও আসল সংকট আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী মহাজোট তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে এসব ঘটনার অবতারণা করা হচ্ছে। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাই হলো সংকট সমাধানের পথ। আর তার জন্য প্রয়োজন আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক বাতিলকৃত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। সরকার যত তাড়াতাড়ি সেই ব্যবস্থা করার জন্য সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী পাস করবে জাতি তত তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে।

দেশে কার্যত এখন জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী কোন সরকার নেই। ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মত বড় রাজনৈতিক দলসহ ২৭টি দলই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। কার্যত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট একাই নির্বাচন করে। এতে করে ১৫৩টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দীই ছিল না। অর্থাৎ প্রায় ৫৫ ভাগ মানুষ পুরোপুরিই তাদের ভোটাধিকার হারায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। বাকি ১৪৭টি আসনে ৫ জানুয়ারি যে ভোটের মহড়া হয়েছে তাতেও ভোট কেন্দ্রে লোক যায়নি। ৩% থেকে ৫% এর বেশি ভোটার উপস্থিত হয়নি। এহেন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণকারীদের জনগণের সরকার বলার কোন সুযোগ নেই। নির্বাচনের আগে সরকারের নীতি নির্ধারকরা বলেছিলেন যে,শুধুমাত্র সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এই নির্বাচন করতে হচ্ছে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির পরেই তাদের সুর পাল্টে যায়। তারা এখন ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকবে বলে আস্ফালন করছে। আর এই ৫ বছর পরেও তাদের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে-এমন কথাও বলছেন।

সরকারের এমন পলিসি বাস্তবায়ন তথা ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য তারা একদিকে যেমন বিরোধী দলের  সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে মিছিল, মিটিং , সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না অন্যদিকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে দেয়ার জন্য একর পর এক চাঞ্চল্যকর খুন, অপহরণ, গুমসহ নানা ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। একটিকে ঢাকা দিতে আরেকটি ঘটানো হচ্ছে। যেহেতু জনগণ তাদের পক্ষে নেই তাই জনগণের ওপরই চালানো হচ্ছে অত্যাচার নির্যাতন, জুলুম-নিপীড়নের স্টিম রোলার। আর সেটা করতে গিয়ে নিজের দলের আন্তঃকোন্দলেও মারা যাচ্ছে মানুষ। জামায়াতে ইসলামী,ইসলামী ছাত্র শিবির সহ ইসলামপন্থীদের ওপর চলছে বর্বর হত্য-নির্যাতন। দলীয় ক্যাডারদের পাশাপাশি দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং দেশী-বিদেশী গুপ্তচরদের একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

পর্যবেক্ষক মহল বলছেন ,এভাবে জনগণের ওপর জুলুম করে দেশ চলতে পারে না। কোন সরকার এভাবে টিকে থাকতে পারে না। সরকার ভিতর থেকে নিজে নিজেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। নিজে নিজেই বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। রাজপথে গণবিস্ফোরণ ঠেকানোর জন্য র‌্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যত নোংরাভাবেই ব্যবহার করা হোক না কেন ফুঁসে উঠা গণবিস্ফোরণ তারা ঠেকাতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের স্বসম্মানে বিদায় নেয়ার উপায় একটাই। তা হলো সবদলের অংশগ্রহণে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তার জন্য প্রয়োজন সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী বিল আনা এবং তা দ্রুত পাস করা। সেই সংশোধনী হতে হবে ১৫ম সংশোধনী বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা। তবে ইতঃপূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় যে ত্রুটি ছিল তা দূর করে মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেয়া। যাতে করে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনদের মত কেউ ক্ষমতায় তিন মাসের স্থলে দুই বছর থাকতে না পারে। সেটা সরকার যত তাড়াতাড়ি করবে ততই মঙ্গল হবে জাতির জন্য এবং আওয়ামী লীগের জন্যও বটে। আগামী মাসেই সংসদের দ্বিতীয় তথা বাজেট অধিবেশন বসবে। বাজেট পাস করেই ১৬তম সংশোধনী বিল পাস করা প্রয়োজন। ২০১১ সালে জুন মাসে বাজেট পাস হওয়ার পর পরই আওয়ামী মহাজোট সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করেছিল বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে। এখনো হয়তো সেটা সম্ভব।

শেয়ার করুন