‘নার্স হয়ে জীবনটাই শেষ’

0
137
Print Friendly, PDF & Email

চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রোগীদের সঠিকভাবে দেখভাল করা থেকে শুরু করে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সমন্বয় এবং ওষুধ পথ্যাদি সঠিকভাবে বিতরণসহ হাসপাতালের মূল দায়িত্ব পালন করতে হয় নার্সদেরই।

হাসপাতালের এই চালিকা শক্তিরাই আজ ভালো নেই। ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে কোনো প্রমোশন নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও কাজ হচ্ছে না বছরের পর বছর।

এ পেশায় এসে নার্সদের আক্ষেপের শেষ নেই। তাদের ভাষায়, ‘এ পেশায় এসে জীবনটাই শেষ।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সিনিয়র নার্স সাবিনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। একটি মাত্র হল যেখানে এক রুমে গাদা-গাদি করে থাকতে হয়। এক রুমে ৫ থেকে ৭ জন মেয়ে থাকে। আমরা যে কাজ করি এটা ঠাণ্ডা মাথার কাজ কিন্তু এক রুমে এতো জন একসঙ্গে থাকায় ঠিকমতো বিশ্রাম নেয়া যায় না। কারণ একেক জনের ডিউটি একেক সময়। ফলে রুমে সবসময় একজন না একজন জেগে থাকে এবং কাজ করে। অন্য দিকে স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়ার ব্যবস্থা নেই।’

এ বিষয়ে নাসিং সুপারিনটেনডেন্ট শান্তনা রানী দাস বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা যে ভালো আছে তা বলা যাবে না, কারণ তাদের কাজের চাপ বেশি, থাকা খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই।’

তিনি জানান, এই হাসপাতাল ১৫শ বেডের হলেও এখানে রোগী থাকে প্রায় ১২শ। সেখানে মাত্র ৭৮৫ জন নার্স রয়েছে, যা অপ্রতুল। এতো রোগীর চাপ নেয়াটা সত্যই কঠিন। তবে এই সংকট থাকবে না। আমরা কর্তৃপক্ষকে আরো এক শ নার্স নেয়ার কথা বলেছি। তারা বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি নেয়া হবে। সেই সঙ্গে থাকা খাওয়ার মান বাড়ানো হবে বলে জানান শান্তনা রানী দাস।

তিনি আরো বলেন, ‘নার্সরা সঠিক সেবার মনোভাব নিয়ে এই পেশায় আসেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে একদিকে যেমন সাধারণ জনগণের মধ্যে নার্সদের সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়, তেমনি নার্সদেরও সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদা বিনষ্ট হয়।’

অন্যদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্র আরো ভয়াবহ। প্রতিদিন প্রায় ২২শ রোগীর বিপরীতে নার্স রয়েছে মাত্র ৮শ।

বাংলাদেশ নার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জামাল উদ্দিন বাদশা বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমাদের এখানে নতুন নতুন ওয়ার্ড খুলে চিকিৎসক নিয়োগ দিলেও নার্স নিয়োগ দেয়া হয় না। এ ব্যাপারটা অদ্ভুত। আমরা সেবা দেব কীভাবে আর কত জনকেই এক সাথে সেবা দেয়া সম্ভব। উন্নত দেশগুলোতে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিন জন নার্স, আর আমাদের দেশে তিন জন চিকিৎসকের বিপরীতে একজন নার্স। আর আমাদের মেডিকেলের অবস্থা দেশের যে কোনো মেডিকেলের চেয়ে ভয়াবহ।’

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট জাহানারা বেগম বাংলামেইলকে বলেন, ‘নার্সের সুপারভাইজাররা তৃতীয় শ্রেণীর হলেও সিনিয়র নার্সরা ২য় শ্রেণী হিসেবেই রয়েছেন। সুপারভাইজারের বেতন স্কেল এবং সিনিয়র নার্সদের বেতন কাঠামো এক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিন চার বছর আগে সুপারভাইজারদের প্রথম শ্রেণী এবং সিনিয়ার নার্সদের ২য় শ্রেণী করার নিদের্শ দেন। এর মধ্যে সিনিয়র নার্সদের ২য় শ্রেণী করা হলেও সুপারভাইজারদেরটা ঝুলে আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার চাকরি আর বেশিদিন নাই। কিন্তু আজ পযর্ন্ত প্রথম শ্রেণী হতে পারলাম না।’

ঢাকা মেডিকেলের নার্স শাহিদা খাতুন বলেন, ‘ভাইরে নার্স হয়েছি বলেই খুব কষ্টে আছি। থাকার কোনো ব্যবস্থ্যা নাই। বাসা দূরে হওয়ায় আসতে যেতেই সময় শেষ, সংসার করার সময় নাই।’

শেয়ার করুন