কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুরু হল বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের নয় দফা লোকসভা ভোটের শেষ পর্বের ভোট। এ পর্বে ভারতের তিন রাজ্যের ৪১টি আসনে ভোট হবে। এগুলি হল উত্তরপ্রদেশ (১৮), পশ্চিমবঙ্গ (১৭), এবং বিহার (৬)। ভোট শুরু হবে সকাল ৭টায় চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে নিরপত্তা বাহিনীর মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকছে আকাশপথে নজরদারির ব্যবস্থাও।
এই পর্বে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর, কৃষ্ঞনগর, রানাঘাট, বনগাঁ, ব্যারাকপুর, দমদম, বারাসত, বসিরহাট, কলকাতা (উত্তর), কলকাতা (দক্ষিণ), যাদবপুর, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, তমলুক, কাঁথি এবং ঘাটাল এই ১৭টি আসনে ভোট হচ্ছে। মোট ১৮৮ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ২,৫৫,৭৫,৭৪৪ জন ভোটার। প্রতিটি আসনেই এবার চতুর্মুখী লড়াই। ফলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। শেষবার ২০০৯ সালের নির্বাচনে ১৪ টি আসন দখল করেছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বাকী তিনটির মধ্যে একটি কংগ্রেস, একটি এসইউসিআই এবং একটি আসনে জেতে বাম শরিক দল সিপিআই। সিপিআইএম একটি আসনও দখল করতে পারেনি। এখন দেখার যে, তৃণমূল তাদের পুরোনো আসনগুলি নিজেদের দখলে ধরে রাখতে পারে নাকি প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া কাজে লাগিয়ে বিরোধীরা তার ফায়দা তুলতে পারে।
এপর্বে ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে তৃণমূলের সৌগত রায়, সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, তাপস পাল, ঘাটাল কেন্দ্রে তৃণমূলের দীপক অধিকারী(দেব), পশ্চিমবঙ্গের সাবেক অর্থমন্ত্রী তথা সিপিআইএম প্রার্থী অসীম দাশগুপ্ত, বিজেপির সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন শিকদার, বিজেপির তারকা প্রার্থী বিশিষ্ট জাদুকর পি.সি.সরকার, কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
তবে শান্তিপূর্ণ ভোট করতে কলকাতাসহ প্রতিটি জায়গায় নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও সহিংসতা থামানো যায়নি। উত্তরচব্বিশ পরগণা জেলার হাড়োয়ায় সিপিআইএম সমর্থকদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। এদিন প্রায় ১০০ জন ঘরছাড়া মানুষ ভোট দেবার জন্য ঘরে ফিরলে তাদের ওপর তৃণমূলের দুবৃর্ত্তরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। ঘরছাড়াদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। এতে চার সিপিআইএম সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী।
কাঁথি এবং ঘাটালে ইভিএম বিতর্ক ঘিরে দেখা দিয়েছে। ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দীব অধিকারী (দেব) এবং কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারীর নামের পাশে কালো কালির দাগ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ ভোটারদের প্রভাবিত করতেই এই কালো দাগ দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভোট উত্তরপ্রদেশের ১৮ টি আসনে। প্রায় ৩ কোটি ভোটার এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এদফায় ভাগ্য স্থির হবে ৩২৮ জন প্রার্থীর। তবে এপর্বে সকলের নজর থাকে বারাণসীর দিকে। এই কেন্দ্রে লড়াই মূলত সীমাবদ্ধ থাকবে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি, আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রাইয়ের মধ্যেই। এছাড়াও নামী প্রার্থীদের মধ্যে আছেন কুশিনগর কেন্দ্র থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস প্রার্থী আর.পি.এন.সিং, বিজেপির জগদম্বিকা পাল।
শেষ পর্বে বিহারের ৬ টি আসনেও এদিন ভোট হচ্ছে। এগুলি হল বাল্মিকীনগর, পশ্চিম চম্পাহরন, পূর্বি চম্পাহরণ, বৈশালী, গোপালগঞ্জ এবং সিওয়ান কেন্দ্র। এপর্বে ৯০ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে উলে্লখযোগ্য রাষ্ট্রীয় জনতা দল প্রার্থী তথা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রঘুবংশ প্রসাদ সিং এবং জনতা দল ইউনাইটেড প্রার্থী তথা বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক প্রকাশ ঝা।