বুড়িগঙ্গা তীর ‘ভাড়া’ দিচ্ছেন নেতারা

0
104
Print Friendly, PDF & Email

বুড়িগঙ্গার দুই তীর ঘিরে চলছে দখলের মহোৎসব। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে বুড়িগঙ্গার তীরে। গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ বালুমহাল। নদীর দক্ষিণ প্রান্তের খেজুরবাগ থেকে দোলেশ্বর পর্যন্ত রয়েছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এমনকি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর (বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু) পিলারের দুই পাশে দখল করে আধাপাকা ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। আর রয়েছে অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকানপাট। এতে হুমকিতে পড়েছে মৈত্রী সেতু। আর মোকামপাড়া থেকে দুই তীর ঘেঁষে ‘নদীতীর ভাড়া’ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় শ্রমিক লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। তবে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মোকামপাড়া, ঢাক জুট মিল, খেজুরবাগ এলাকায় নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কাঁচা-পাকা শতাধিক ঘর। প্রতিটি ঘর থেকে মাসে চার হাজার টাকা করে ভাড়া তুলছেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। আর এ টাকার ভাগ চলে যাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে।

অভিযোগ রয়েছে, মৈত্রী সেতুর দুই পাশে অর্ধশতাধিক দোকান ও টংঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল আলম সামু, যুবলীগ নেতা জামাই হানিফ ও দীন ইসলাম। এ ছাড়া সেতুর নিচে বেশ কিছু স্থাপনা তুলে ভাড়া দিয়েছেন স্থানীয় শামীম আলম ও শফিক। একই এলাকায় নদীতীর দখল করে বালুমহাল ভাড়া দিয়েছেন ডিপটি, শাহ আলম, সৌরভ আলম আক্তার, কামাল সরদার, পিয়ার হাজী ও ফয়েজ। এসব দখল আর দূষণের কারণে হুমকিতে রয়েছে সেতুটি। অন্যদিকে আগানগর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর পাড়ে একাধিক প্রভাবশালী মহল চালাচ্ছে ইট-বালির ব্যবসা। ভলগেটের মাধ্যমে বালি এনে তারা নদীর তীরে খালাস করছে। ফলে তীরসহ তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী। এরপর ভরাট জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন এখানে শত শত ট্রাক বালি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া যত্রতত্র দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বর্ধিত ভবনের উচ্ছেদকৃত অংশ পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিদিনই নদীর কোনো না কোনো অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি প্রকাশ্যে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চলছে নদী ভরাটের কাজ। ভরাট অনেক স্থানেই নতুন করে নির্মিত হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। একই সঙ্গে অনেকেই আবার নদীতীরে পোড়া কয়লার ব্যবসা করছেন।

মোকামপাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার তীর ভাড়া দিয়ে মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল আলম সামুর বিরুদ্ধে। স্থানীয় কয়লা ব্যবসায়ী হায়াত আলী জানান, নদীতীরে যারা কয়লার ব্যবসা করেন তারা প্রতি মাসে সামুকে দিয়ে থাকেন তীর ভাড়ার টাকা। কেন টাকা দিয়ে থাকেন চানতে চাইলে তিনি বলেন, সামু নাকি এই তীর বিআইডবি্লউটিএর কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। তাই তাকে টাকা দিতে হয়। এ বিষয়ে সামিউল আলম সামুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক লীগ নেতা কাইয়ুম ইজারা নিয়েছেন। আমি তার প্রতিনিধি হয়ে টাকা তুলি।’ সেতুর পাশে অবৈধ স্থাপনা তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অবৈধ স্থাপনা তুলিনি। কেউ হয়তো আমার   নাম ভাঙিয়ে এগুলো করছে।

‘ইকুরিয়ার বাসিন্দা জুয়েল মেম্বার বলেন, নদীখেকোরা দিনের আলোতেই নদী দখল করে তাদের আধিপত্য বিস্তার করছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব দখল চললেও প্রশাসনিক অ্যাকশন চোখে পড়ছে না।

কালিগঞ্জের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ মন্টু জানান, নদী দখল রোধে তারা বিভিন্ন মহলে আবেদন-নিবেদন করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎপরতার মুখে নদী দখল প্রক্রিয়া সাময়িক বন্ধ হলেও বর্তমানে তা আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী নেতারা নদী দখলে এগিয়ে রয়েছেন। আর এমতাবস্থায় এলাকাবাসী অবৈধ দখলের কবল থেকে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা ও নদীর দক্ষিণ পাড়ের অবৈধ স্থাপনামুক্ত করতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক মাস আগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছিল। তখন স্থাপনা উচ্ছেদসহ কয়েকজনকে দখলের অভিযোগে জরিমানাও করা হয়। শীঘ্রই ফের অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন