দিল্লিতে পরবর্তী সরকার যেই দলই গঠন করুক না কেন, তাদের অন্যতম প্রধান ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গড়ে তোলা সুসম্পর্ককে অব্যাহত রাখা। কারণ ভারত ও বাংলাদেশ সুসম্পর্ক ভারতের জন্যই লাভজনক হবে।
ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা ইন্ডিয়া টাইমসের সহযোগী ইকোনমিক টাইমসের গতকাল শনিবারের সম্পাদকীয় কলামে এসব কথা বলা হয়।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সরকার গঠন করার পর থেকেই হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনার বর্তমান মেয়াদে দুই দেশের মধ্যে যত লেনদেন হয়েছে এতে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতই বেশি লাভবান হয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে সহায়তা করেছে ঢাকা; বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য উলফার সদস্যদের প্রথমে গ্রেফতার এরপর তাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যখন দেশটির সরকারে ছিল তখন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের পরিস্থিতি অশান্ত ছিল, যা বর্তমানে নেই বললেই চলে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্যও অগ্রগতি লাভ করেছে এবং বর্তমানে ভারতের কেন্দ্র থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি বর্তমানে অবহেলিত হলেও দিল্লির নতুন সরকারের মূল ল্য এটাই থাকতে হবে।
এই পুরো বিষয়টিকে সামনে রাখার পরেও আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিজেপি যে সুরে কথা বলেছে তা সত্যিই হতাশাজনক। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে বা যেকোনোভাবেই হোক না কেন ভারতে আগত অভিবাসীদের স্পর্শকাতর বিষয়টিকেই ওই অঞ্চলগুলোতে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বেছে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় উৎসব দুর্গাষ্টমী যেসব বাঙালি পালন করেন কেবল তারাই ভারতের বৈধ নাগরিক এবং তারা ছাড়া বাকিদের ব্যাগ গুছিয়ে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের আগেই অর্থাৎ আগামী ১৬ মের মধ্যে বাংলাদেশে রওনা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মোদি। মোদির এই বক্তব্য শুধু যে নির্বাচনী আচরণবিধিই ভঙ্গ করেছে তা-ই নয়, এমনকি বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্প্রীতিকেও বিভক্ত করেছে।
আসামও বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। অভিবাসনসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্যটি বর্তমানে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। তাই তথাকথিত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কথা না বলে তিনি অন্তত এটা বলতে পারতেন, রাজ্যকে রা করার জন্য যা করতে হয় তা-ই তিনি করবেন।
বিজেপি পরবর্তী সরকার গঠন করলে দলটির দিকে আশা নিয়ে যারা তাকিয়ে আছেনÑ বিশেষ করে দলটির সদস্য ও নেতাকর্মীরা, তাদের অবশ্যই কথা বলার সময় শব্দচয়নের প্রতি আরো বেশি খেয়াল রাখতে হবে। কারণ বৃহত্তর স্বার্থেই সন্দেহের তীর ছোড়ার মাধ্যমে তীè নির্বাচনী বক্তৃতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক, যা পরবর্তী সময়ে মূলত ভারতের জন্যই সহায়ক হবে।