বৈশাখের তপ্ত দুপুরে আজ শনিবার রাজধানীর বাংলামটরের পিচঢালা রাস্তার দুপাশের সারি সারি প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে। সকাল থেকে বেশির ভাগ প্রাইভেট কার আসছে কালো কাচ বদলে সাদা কাচ সংযোজন করতে। কিন্তু সাদা কাচ বাংলামটর থেকে অনেকটাই উধাও। তবে বাড়তি টাকা গুনলে গাড়ির মালিকদের দুশ্চিন্তা দূর হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার সব ধরনের যানবাহনের কালো কাচ বদলে সাদা কাচ বসানোর শেষ দিন। তাই ভিড় বেশি। সাদা কাচের দামও বেশি, যা অনেকটা আকাশ ছুঁয়েছে। বাংলামটরের হানিফ মটরসের সামনে কারিগর আনোয়ার পারভেজও সকাল থেকে এ কাজেই ব্যস্ত। কয়েক দিন ধরে দম ফেলার সময় নেই তাঁর। আজ সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সাতটি প্রাইভেট কারের কাচ বদল করেছেন পারভেজ। তাই পারিশ্রমিক বেশি মিলছে জানিয়ে পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা একটু বেশি পাচ্ছি। তবে গাড়ির সাদা গ্লাসের দাম তো অনেক বেশি। সুযোগ বুঝে দাম চাইতাসে।’ বাংলামটরের প্রাইভেট কারের খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান ঘুরে জানা গেছে, হাইয়েস মডেলের মাইক্রোবাসের সাত পিসের সাদা কাচের সেটের মূল্য আগে বিক্রি হতো ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে। এখন সেই গ্লাস ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নোয়া মডেলের মাইক্রোবাসের পাঁচ পিসের কাচের সেট ১২ হাজার টাকার, দাম হাঁকানো হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। মহাখালীর ওসাকা মটরসের স্বত্বাধিকারী দিদার হোসেন জানান, মধ্যবিত্তরাই গাড়ির কাচ বদলাতে আসছেন। ১০ মে পর রাস্তায় প্রাইভেট কার নামালে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে তাঁদের এই সতর্কতা। সে কারণে প্রিমিও, স্টারলেট, এক্স করোলা, এল এক্স, মারুতি মডেলের প্রাইভেট কারের সাদা কাচের চাহিদা বেশি। এসব মডেলের গাড়ির কাচ আগে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এখন ৪০ হাজার টাকা দিয়েও মিলছে না। নাজমুল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘গাড়িতে সাদা গ্লাস সংযোজনের সরকারের ঘোষণার কদিন আগে আমার প্রিমিও গাড়িটির সাদা গ্লাস খুলে কালো গ্লাস বসিয়েছি। এখন আমার গাড়ির পুরোনো গ্লাসটিই আমাকে তিন গুণ দামে কিনতে হচ্ছে।’ বাংলামটরের জুয়েল অটো করপোরেশন নামে গাড়ির কাচ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি জুলফিকার হাসান বলেন, ‘সবাই গাড়ির সাদা গ্লাস খুলে কালো গ্লাস বসান। তাই কালো গ্লাসের চাহিদা বেশি। আমরা সেভাবেই এলসি খুলেছি। এখন কালো গ্লাসগুলো পড়ে আছে। সাদা গ্লাস নেই। বাজার স্বাভাবিক হতে আরও মাস খানেক সময় লাগবে।’ জুলফিকার হাসান জানান, চীন থেকে বেশির ভাগ কাচ আনা হয়। নতুন করে সাদা কাচ আমদানি করতে এলসি খোলা হচ্ছে। জানা গেছে, বদল করা আগের সাদা কাচগুলো দোকানিরা বিক্রি করছেন। কোনো কোনো ক্রেতা সেট অনুযায়ী কাচ পাচ্ছেন না। তাই তাদের সাদা কাচের সন্ধানে মহাখালী, পুরান ঢাকার ধোলাইখাল পর্যন্ত ছুটতে হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, কাল যানবাহনে কালো কাচ দেখা গেলে জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।