‘ইজ্জতের রশি’ দিয়ে লাশ বাঁধা

0
219
Print Friendly, PDF & Email

নদী এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র নিয়ে চলাচলের সময় সঙ্গে রশি রাখতে হয়। সেই রশির এক মাথায় অস্ত্র বাঁধা থাকে, যাতে পানিতে পড়ে গেলে রশি দিয়ে হদিস মেলে। পুলিশ সদস্যরা রসিকতা করে বলেন, ‘ইজ্জতের রশি।’ পুলিশ প্রবিধানের ৯৬১ ধারা অনুসারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সরকারি-ভাবে এ রশি সরবরাহ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাত খুনের মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিহত ব্যক্তিদের শরীরের সঙ্গে ইটভরা বস্তাগুলো এ ধরনের রশি দিয়ে বাঁধা ছিল।
সাত খুনের মামলা তদন্ত করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ মণ্ডল। তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, তদন্তকারী কর্মকর্তারা ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে সাদাপোশাকে অস্ত্রসহ আটক হওয়া র‌্যাব সদস্য মোস্তফা কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম অভিযোগ করেন, র‌্যাব সদস্যরা আগে থেকেই নজরুলকে নজরে রাখছিলেন। নজরুলের আদালতে হাজিরার দিন ২৭ এপ্রিল আদালতের ভেতরে র‌্যাবের একজন সদস্য সাদাপোশাকে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করার সময় নজরুলের লোকজন সন্দেহবশত আটক করেছিলেন। পরে র‌্যাবের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর লোকটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই সদস্যের নাম ও পরিচয় পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা কামাল সব অভিযোগ অস্বীকার করেন বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ ২৭ এপ্রিল দিবাগত রাত তিনটার দিকে একটি মাইক্রোবাসসহ তিনটি গাড়িকে তল্লাশির জন্য রাস্তায় থামায়। তিনটি গাড়ির সামনের গাড়িতে ছিলেন র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ। পেছনের গাড়িতে ছিলেন মেজর আরিফ হোসেন। র‌্যাবের অধিনায়ক গাড়ি থেকে নেমে টহল পুলিশকে জানান, তাঁরা বিশেষ অভিযানে যাচ্ছেন। এরপর পুলিশ গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়। পুলিশ সদস্যরা জানান, গাড়িগুলো নারায়ণগঞ্জের নদীর পাড় দিয়ে চলে যায়। ৪৫ মিনিট পরে আবার সেগুলো র‌্যাব কার্যালয়ের দিকে চলে যায়। ওই তিনটি গাড়ি নিয়ে নানা সন্দেহ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
এর আগে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাকরি হারানো র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে অকালীন ও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। তাঁরা এখনো সেনানিবাসে আছেন বলে গেছে। সেনা সদর দপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুসারে এসব কর্মকর্তা সব ধরনের সুবিধা পাবেন। এ কারণে তাঁরা অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটি ভোগ করবেন এক বছর।
২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাঁদের ছয়জনের এবং পরদিন একজনের লাশ ভেসে ওঠে।

শেয়ার করুন