নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিলেন নারায়ণগঞ্জের ৩ ওসি
সাত খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল
গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। তাদের নাম জানালেও তদন্তের ‘স্বার্থে’ এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার সকালে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ এবং যেখানে তাদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল ওই দুটি স্থান দেখে এসে নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
এসপি মুহিদ জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে মিন্টু, মাসুমা ও টিপু নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের দুজনকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে নারায়ণগঞ্জে এর আগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে নূর হোসেন ও হাজি মো. ইয়াসিনসহ মামলার আসামিদের কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
তিনজনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, “তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। স্বচ্ছ তদন্তের জন্য আমরা অনেককেই গ্রেপ্তার করব, অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করব, অনেককে আটক করব। সেগুলো সময়মতো আপনারা (সাংবাদিকরা) জানতে পারবেন।”
তিনি জানান, নিহত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের জামাতা বুধবার ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে এতে আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
গত ২৭ এপ্রিল চন্দনের পাশাপাশি কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করা হলে নজরুলের পরিবার একটি মামলা করে, যাতে কাউন্সিলর নূর হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মো. ইয়াসিনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর অপহরণের ওই মামলাটি হত্যামামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। এখন দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রথমে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফজলুল হক তালুকদার এই মামলা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আউয়ালকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।
হত্যাকাণ্ডে র্যাবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় এই বাহিনীকে তদন্ত সংক্রান্ত কাজ থেকে দূরে রাখতে বলেছে আদালত।
তবে আউয়ালের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনের সখ্যের অভিযোগ নজরুলের পরিবার তোলার পর বুধবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে ডিবির ওসি মামুনূর রশীদ মণ্ডলকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, “আমি সবচেয়ে ভালো তদন্ত কর্মকর্তা খুঁজে দায়িত্ব দিয়েছি।”
আটদিনে তদন্তের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি আছে কি না -জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি একটি বড় আকৃতির পরিকল্পিত ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। এধরনের মামলার তদন্তের সময় যথেষ্ট পরিকল্পনা করে এগুতে হয়, যেন কোনো ত্রুটি থেকে না যায়।
“আমরা রাতারাতি কোনো বিপ্লবাত্মক তদন্ত করতে পারি না। একটু সময় লাগবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক বিষয় জোড়া দিয়ে একটি স্বচ্ছ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে একটু সময় লাগে।”
তদন্তে ‘যথেষ্ট অগ্রগতি’ হলে এখনো ‘সিদ্ধান্ত দেয়ার’ মতো কিছু হয়নি বলে জানান মুহিদ উদ্দিন।
গত ৩০ এপ্রিল অপহৃতদের লাশ নদীতে ভেসে ওঠার পর তা তোলা হয়
গত ৩০ এপ্রিল অপহৃতদের লাশ নদীতে ভেসে ওঠার পর তা তোলা হয়
এই প্রসঙ্গে নরসিংদীর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের তদন্তের কথা উল্লেখ করেন নরসিংদীর এই সাবেক পুলিশ সুপার, যাকে নারায়ণগঞ্জে অপহরণ করে হত্যাকাণ্ডের পর এই জেলায় আনা হয়।
মুহিদ উদ্দিন বলেন, লোকমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতের প্রশংসাও পেয়েছিল।
তবে লোকমানের পরিবার ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালতে নারাজি আবেদন দিয়েছিল।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর নারায়ণগঞ্জে এসপির দায়িত্বে আসা মুহিদ সকাল ১০টার দিকে শিবু মার্কেট এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যান।
গত ২৭ এপ্রিল এই স্থান থেকে দুটি গাড়িতে থাকা নজরুল ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাদের সঙ্গীদের ধরে নেয়া হয়েছিল।
ফতুল্লা থানারধীন শিবু মার্কেট থেকে মুহিদ যান বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া শান্তিবাগ এলাকায়।
অপহরণের তিন দিন পর এই এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে অপহৃতদের লাশ ভেসে উঠেছিল।
এদিকে আইনজীবী চন্দন সরকারের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী প্রতীকী অনশন করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি।
বেলা ১২টায় আদালত প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
নিহত চন্দন সরকারের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতে এই আইনজীবীর বাড়িতে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ।