নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পর এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর ছেলে দীপু চৌধুরীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছেন নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান।
শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান আজ বুধবার টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, নজরুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নাসিক ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের সঙ্গে দীপু চৌধুরীর নানা ব্যবসা রয়েছে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে একসঙ্গে তারা ঠিকাদারি ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে অবস্থিত দীপু চৌধুরীর মালিকানাধীন রিনালয় সিএনজি স্টেশনের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন নুর হোসেন। এ কারণে দীপু চৌধুরীর সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে নূর হোসেনের।
শহীদ চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, দীপু চৌধুরীর মাধ্যমেই নজরুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন র্যাব-১১-এর অধিনায়কের (সিও) সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার মাধ্যমেই র্যাবের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে নূর হোসেন ও তার লোকজন। এর পরই নূর হোসেন র্যাবের অধিনায়ককে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। খুনের টাকা দুটি বেসরকারি ব্যাংক ছাড়াও দীপু চৌধুরীর মাধ্যমে র্যাবকে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন শহীদ চেয়ারম্যান। তিনি জানান, ‘গত মঙ্গলবার দুপুরে আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কাছে এসব তথ্য জানিয়েছি।’
শহীদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ তার বক্তব্য নিয়েছে। পুলিশকেও তিনি এসব কথা বলেছেন।
শহীদুল ইসলাম আরো অভিযোগ করেন, শুধু নূর হোসেনের সঙ্গেই নয়, দীপু চৌধুরীর সঙ্গে সখ্য রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আলোচিত ঠিকাদার আবু সুফিয়ানের। মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠ আবু সুফিয়ানও তার জামাতাকে হত্যা করতে টাকার যোগান দেয় বলে অভিযোগ করেন শহীদুল।
এর আগেও নজরুলকে পাঁচবার খুনের চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, আগে ব্যর্থ হয়ে ষষ্ঠবার র্যাবকে দিয়ে সফল হয়েছে নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা।
নজরুলের শ্বশুরের ভাষ্য অনুযায়ী, খুনের ছয় কোটি টাকার যোগান দেয় নূর হোসেন ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার আবু সুফিয়ান, নূর হোসেনের ভাতিজা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল, বিএনপি নেতা ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুলের সঙ্গে নির্বাচনে পরাজিত ইকবাল হোসেন এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু এবং বিএনপি নেতা হাসমত আলী হাসু। শহীদুলের দাবি, তারা সবাই সাতজনকে খুন করতে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার যোগান দেয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শিমরাইল শাখা এবং যমুনা ব্যাংকের রায়েরবাগ শাখা থেকে এসব টাকার বড় অংশ সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। কিছু টাকা নগদও দেয়া হয়।
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জীবনের ওপর অনেক হুমকি আসছে। তবুও আমি সত্য বলে যাব। শেষ বয়সে আমার ফাঁসি হয়, হোক।’
এসব তথ্য তিনি কোথায় পেলেন জানতে চাইলে শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমেই এসব তিনি জেনেছেন। তার ছোট ভাই ও মামলার আসামি হাসমত আলী হাসুর ব্যবসায়িক অংশীদার জসিম তাকে ফোনে অনেক তথ্য জানিয়েছে