আর ভুল করতে চাই না: তমা

0
181
Print Friendly, PDF & Email

চলতি সময়ে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে নিজের শক্ত অবস্থানের জন্য শুরুতেই বড় প্রোডাকশনের হাত ধরে বড় পর্দায় আসছেন অনেক চিত্রনায়ক-নায়িকা। এসেই বড় বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয় করছেন। পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবেও কেউ কেউ হিট নায়কের সাথে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু চিত্রনায়িকা তমা মির্জ্জার ক্যারিয়ারের শুরু করার গল্পটা সম্পূর্ণই আলাদা।

একটি পাঁচতলা বিল্ডিংয়ে উঠার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে আমাদের যতটা কষ্টভোগ করতে হয়, তেমনি তার ক্যারিয়ারের আজকের অবস্থান তৈরির জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। কথা হচ্ছিল এ সময়ের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী তমা মির্জ্জার সাথে। বাংলানিউজের বিনোদন বিভাগের ফটোসেশন শেষে আলাপচারিতায় জানালেন তার ক্যারিয়ারের নানা সংগ্রামের কথা।

চিত্রনায়িকা হওয়ার আগে থেকে তমা একজন ভালো নৃত্যশিল্পী। বাগেরহাটের এই মেয়েটির বয়স যখন চার, তখনই নৃত্যের ছন্দে কাঁপাতেন শিল্পকলা একাডেমীর মঞ্চ। নাচের হাতেখড়ি নিয়ে তমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার নাচের হাতেখড়ি বাগেরহাটের কোহিনূর আক্তারের কাছে। এরপর শরিফুল ইসলাম এবং ঢাকায় এসে হিরু ভাইয়ের কাছে নাচ শিখি। নাচে ২০০৭ সালে সাধারণ নৃত্যে জাতীয় পুরস্কার লাভ করি। এছাড়া ২০০৮ সালে কলকাতার একটি ওয়ার্কশপে ভাস্কর দা’সহ অনেকের নিকট নাচ শেখার সুযোগ হয়েছে।’

নাচ নিয়ে ব্যস্ত থাকা এই মানুষটির বড় পর্দায় আসার কোন ইচ্ছে ছিল না। অনেকটা কাকতালীয়ভাবে শাহিন-সুমনের হাত ধরে আসলেও ‘বলো না তুমি আমার’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় কাজের শুরু। ছবিটি পরিচালনা করেন এম.বি.মানিক। এরপর এক এক করে অভিনয় করেন বদিউল আলম খোকনের ‘একবার বলো ভালোবাসি’, অপূর্ব রানার ‘পালাবার পথ নেই’, অনন্ত হিরার ‘ও আমার দেশের মাটি’, সোহানুর রহমান সোহানের ‘এক মন এক প্রাণ’, মনতাজুর রহমান আকবর এর ‘ছোট্ট সংসার’, কাজী হায়াৎ এর ‘মানিক রতন দুই ভাই’, ‘ইভ টিজিং’, শাহাদৎ হোসেন লিটনের  ‘তোমার কাছে ঋণী’।

ওপরের ছবিগুলোর পরিচালকের নাম দেখে বোঝাই যাচ্ছে বেশকিছু ভালো পরিচালকের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে তমার। তার পরেও প্রশ্ন আসে, তেমন কোন হিট ছবির তালিকায় তমার নাম নেই কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারের শুরুতেই প্রধান নায়িকা হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাইনি। আমাকে ধীরে ধীরে সংগ্রাম করে প্রধান নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে। আর ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি অনেক ভুল করেছি, এখন আর ভুল করতে চাই না। আমি বর্তমানে ছবির গল্প ও আমার বিপরীতে কে অভিনয় করছেন সবকিছু দেখে কাজ করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘হিট বা ফ্লপ ছবির জন্য আমি তো একা দায়ী না। এখানে একজন পরিচালক আমাকে কোন চরিত্রে, কোন গল্পে এবং কার বিপরীতে অভিনয় করতে বলছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। যিনি অভিনয় জানেন না, তার সাথে অভিনয় করতে গেলে তো দর্শক মেনে নেবে না। তাই আগে আমি অনেককিছু না বুঝে কাজ করেছি। তাই সামনে একই ভুল করতে চাই না।’

তমা সম্প্রতি শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘নদীজন’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। কুষ্টিয়ায় নদীর পাড়ে শুটিং শেষ করা এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন বলে জানান এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘এ ছবিটি আমার এখন পর্যন্ত বেস্ট ছবি। এ ছবিতে আমার চরিত্রের নাম ছায়া। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমি নদীর পাড়ের মানুষদের সাথে কথা বলেছি, থেকেছি। এখানে আমাকে নন গ্ল্যামারাস একটি মেয়ের চরিত্রে দেখতে পাবেন দর্শক। ছবিটিতে আমি একজন গ্রামের মেয়ের মত হেঁটেছি, খেয়েছি এমনকি সেভাবে কথাও বলেছি।’

এ ছবিটি নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ কথা হলো তার সাথে। এতে বোঝাই যাচ্ছিল, ছবিটি নিয়ে বেশ আশাবাদী এই চিত্রনায়িকা। কিছুদিন আগে ছবিটির ডাবিং শেষ হয়েছে। এর বাইরে তমা আরেফিন শুভ’র সাথে ‘লাভলী’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। শাহাদাৎ হোসেন লিটন পরিচালিত এ ছবিটির কাজ শ্রীলঙ্কায় হয়েছে। এর কাজও শেষ পর্যায়ে।

এছাড়া নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া নিয়ে তমা জানান, ‘আমি বর্তমানে তিনটি নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এরমধ্যে দেবাশীষ বিশ্বাসের একটি, আর শাহাদাৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ‘তুমি আমার প্রিয়তমা’,‘মন বোঝে না’ ও রায়হান খানের একটি ছবিতে শিগগিরই কাজ শুরু করব। এরমধ্যে লিটন ভাইয়ের ছবিতে আমার বিপরীতে শায়ার নামে নতুন একটি ছেলেকে অভিনয় করতে দেখা যাবে। আর বর্তমানে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর ‘প্রেমের অধিকার’ নামে একটি ছবিরও কাজ চলছে।’

বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দার টেলিছবিতেও দেখা গেছে এ অভিনেত্রীকে। রবিন খান পরিচালিত ‘ঘর শ্বশুর বরণ’ টেলিছবিতে প্রথম আমিন খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। এরপর নায়ক রাজ রাজ্জাক পরিচালিত ‘ছুঁয়ে থাকো’ এবং এবারের ঈদের জন্য বি ইউ শুভর ‘দূরত্ব’ নামক একটি টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন।

বড় পর্দার নায়িকা ছোট পর্দায় কেন? জানতে চাইলে তমা বলেন, ‘আমার মনে হয় একজন অভিনেত্রীর মঞ্চে, ছোট পর্দায় এবং বড় পর্দায় কাজের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। আমি হিরোইন না, অভিনেত্রী হতে চাই। এখনও মঞ্চে কাজের সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে মঞ্চেও অভিনয় করার ইচ্ছে আছে।’

এবার আসি তমার পরিবার প্রসঙ্গে। বাবা মির্জ্জা আবু জাফর, মা ফাতেমা বেগম এবং ছোট ভাই তুর্য মির্জ্জাকে নিয়েই তার পরিবার। স্বপরিবারে ঢাকাতেই থাকেন বাবা-মার আদরের একমাত্র এই মেয়েটি। নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে শুটিং, শপিং থেকে শুরু করে সব জায়গায় যান। বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন।

ভবিষ্যতে ব্যারিস্টার হতে চান কি-না জানতে চাইলে তমা মিষ্টি হেসে বললেন, ‘অনার্স শেষ করে ব্যারিস্টার ডিগ্রীটা নিতে চাই। আর আগামী কয়েক বছর কষ্ট করব, নিজেকে বিভিন্নভাবে তৈরি করছি। তাই বিয়ে-শাদী নিয়েও বর্তমানে ভাবছি না। পড়াশুনা ও অভিনয় নিয়েই থাকতে চাই।’

শেয়ার করুন