গাইবান্ধাপৌর এলাকার ময়লা আবর্জনা এবং গৃহস্থালীর বর্জ্য ব্যবহার করে বায়োগ্যাস ও জৈব সার উৎপাদন করা হচ্ছে। যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বসতবাড়ির জ্বালানী সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জেলা শহরের আলাই নদী তীরবর্তী পশু হাসপাতাল সড়কের বানিয়ারজানে পৌরসভার সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে পৌরসভার সহযোগিতায় আগ্রহী পৌরবাসীদের নিকট থেকে মাসিক ৪০ টাকা সার্ভিস চার্জ নিয়ে প্রতিটি বাড়ী থেকে গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করে। বর্তমানে ১ হাজার ৩ জন পৌরবাসীর বাড়ী থেকে এ বর্জ্য সংগৃহিত হয়। প্রতিদিনকার সংগৃহিত বর্জ্য প্রথমে বাছাই করে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেগুলো দ্রুত পচনশীল তা বাছাই করে বায়োগ্যাসে উৎপাদন প্লান্টের ইনলেটে (কুপ) ডাম্পিং করা হয়। অপর অংশ যায় জৈব সারে উৎপাদন প্লান্টে।
উল্লেখ্য, বায়োগ্যাস উৎপাদনে ডাম্পিং করা পচনশীল আবর্জনায় হাইড্রোলিক চেম্বারের রি-সাইকেলিং ওয়াটার মিশিয়ে তা ডাইজেস্টার চেম্বারে জমা করা হয়। এ থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয় প্রতিদিন ৩০ কিউবিক মিটার। যা কন্ট্রোল রুমে প্রেসার দিয়ে ব্যবহারকারীদের কাছে পাঠানো হয়। প্রকল্প এলাকার ২ কি.মি. এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০টি পরিবার প্রতিদিন এ বায়োগ্যাস ব্যবহার করে ৩ বেলা তাদের রান্নার কাজ সম্পন্ন করছে। সকাল দুপুর এবং বিকেলে ৩ দফায় প্রতিটি পরিবারকে ৫ ঘন্টা গ্যাস দেয়া হয় দশমিক ৭৫ কিউবিক মিটার। এজন্য গ্যাস ব্যবহারকারীদের মাসে দিতে হয় ৬শ’ টাকা। এছাড়া বায়োগ্যাস এর সংযোগ গ্রহণ করতে চুলা, পাইপসহ জামানত বাবদ গ্রাহকদের দিতে হয়েছে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। বায়োগ্যাস ব্যবহারকারী রোকসানা বেগম জানালেন, শুরু থেকেই বায়োগ্যাসের সংযোগ নিয়ে এই গ্যাসেই প্রতিদিন তার ৬ সদস্যের রান্না হয়। এ দিয়ে এক ঘন্টায় তিনি ভাত ও ২টি তরকারি রান্না করতে পারেন। তা পরিবারের জন্য যথেষ্ট সাশ্রয়ী। তিনি আরো জানালেন, প্রথমে কেউ বায়োগ্যাসের সংযোগ নিতে না চাইলেও এখন যথেষ্ট চাহিদা থাকলেও উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায় নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। বাছাইকৃত শুক্নো আবর্জনা ও গৃহস্থালী বর্জ্যের অপর অংশ জৈব সার উৎপাদন প্লান্টের ৬টি বিশেষ বক্সে ডাম্পিং করা হয়। বর্জ্য পচানোর জন্য সেখানে তাতে অনুজীব ট্রাইকোডার্মা ও হালকা পানি মেশানো হয়। এভাবে দু’পাশে পচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে অন্য একটি বড় বক্সে তা স্থানান্তর করে সেখানে রাখা হয় ৭দিন। পরে তা পলিথিন মোড়ানো সোলার ড্রায়ারে শুকিয়ে নেটিং করে তা বস্তাবন্দী করা হয়। এভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিবারের বসতবাড়ীর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ছাড়া ও ২ মাসে উৎপাদিত হয় দেড় টন জৈব সার।
পরীক্ষা করে উৎপাদিত জৈব সারে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার এবং প্রয়োজনীয় ও অরগানিক কার্বন সহ অন্যান্য ফসল বান্ধব উপাদান পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য বায়োগ্যাস উৎপাদনের গ্যাস প্লান্টে যে বর্জ্য জমে তা পুনরায় কম্পোস্ট সার প্লান্টে ব্যবহার করে জৈব সার উৎপাদন করা হচ্ছে।
এখনো রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন না হওয়ায় উৎপাদিত জৈব সার বাজারজাত করা হচ্ছে না। তবে পরীক্ষামূলকভাবে ৭ টাকা কেজি দরে কৃষি বিভাগের সহায়তায় এই বর্জ্য জাত জৈব সার শাকসবজি চাষে বিক্রি হচ্ছে। এই সার ব্যবহারকারীরা ফসল উৎপাদনে অনেক বেশী ফলন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
গাইবান্ধা পৌরসভা এবং প্রাকটিক্যাল এ্যাকশনের সহযোগিতায় ইউনিসেফ ও ইউএসএইড’র অর্থায়নে ছিন্নমুল মহিলা সমিতি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এ প্রসঙ্গে পৌর মেয়র মোঃ শামছুল আলম বলেন, নবায়ন যোগ্য পরিবেশ বান্ধব সাশ্রয়ী জ্বালানী ব্যবহার করে গাইবান্ধার পৌরবাসী উপকৃত হবে এবং জৈব সার ব্যবহারে মঙ্গা প্রবন এ এলাকার কৃষি উৎপাদনও বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। যা দারিদ্র বিমোচনেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি গাইবান্ধা শহর হবে আবর্জনা মুক্ত উন্নত শহর।