স্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তা খুন : মেয়ে ঐশীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ৫ জুন সাক্ষ্য গ্রহণ

0
158
Print Friendly, PDF & Email

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় ঘাতক মেয়ে ঐশী রহমান (১৯) সহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামি ৫ জুন সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান ওরফে জনি (২৭), মিজানুর রহমান রনি (২৫)।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হকের আদালতে এ মামলাটির অভিযোগ আমলে নেয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার শুনানির শুরুতে ঐশীর আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা বলেন, মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি। ঐশী অব্যাহতি পাওয়ার দাবিদার।
এ সময় বিচারক বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসাবে মামলার তদন্তের বিষয়ে আপনার কোন বক্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ থেকে অব্যাহতির জন্য কোন আইনগত সুযোগ আছে কিনা সে বিষয়ে আপনি শুনানি করেন।
এরপর ঐশীর জামিন আবেদনের শুনানি করেন। তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ মাস যাবত ঐশী কারাগারে আছে। তাকে জামিন দেওয়া যেতে পারে।
এরপর ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান জনি ও রনির পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবীরা।
পরে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট শাহ আলম তালুকদার বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ঐশী ও মামলার সাক্ষিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ অবস্থায় তাদের অব্যাহতি বা জামিন কোনটিরই কোন সুযোগ নেই।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের অব্যাহতি ও জামিনের উভয় আবেদনই নাকচ করে রাষ্ট্রপক্ষকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনাতে বলেন।
এসময় আসামিরা দোষী না নির্দোষ এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে জবাবে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
সংশ্লিষ্ট বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আগামি ৫ জুন সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিকে একই মামলায় অভিযুক্ত এসবি দম্পতির বাসার কাজের মেয়ে সুমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় কিশোর আদালতে বিচারের জন্য নথিটি ঢাকার ১ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দেন। একইসঙ্গে সুমির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ২০ মে দিন ধার্য করেন।
গত ৯ মার্চ মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (পূর্ব)-এর পরিদর্শক মো. আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/ ২১২/১০৯/ ৩২৮/৩৮০/ ১১৪/৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রের একটিতে ঐশী, জনি ও রনিকে অন্তভূক্ত করা হয়। কাজের মেয়ে সুমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
অভিযোগপত্রে ঐশীর বিরুদ্ধে মা-বাবাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা, আলামত গোপন, আলামত নষ্ট, চুরি ও বাবা-মাকে হত্যার জন্য বিষ প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের ২৪ আগষ্ট ঐশী আদালতে পিতা মাতার হত্যার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
গৃহকর্মী সুমির বিরুদ্ধে তার সামনে কফিতে ঘুমের ওষুধ মেশানোর পরও তা মাহফুজুর ও স্বপ্না রহমানকে না জানানো কিংবা ঘটনার সময় ডাক চিত্কার না দেওয়া এবং লাশ গোপনে সহায়তার অভিযোগ করা হয়েছে।
আসামি জনির বিরুদ্ধে ঘটনায় নেপথ্যে থেকে ঐশীর বাবা-মাকে হত্যার প্ররোচনা দেয়া এবং ঐশীকে দুবাই পাঠানোর প্রলোভন দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া খুনের ঘটনা জেনেও রনির বিরুদ্ধে ঐশীকে তার দুঃসম্পর্কীয় খালা কুলসুমের বাসায় আশ্রয় করে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর দিন তাদের মেয়ে ঐশী রহমান রমনা থানায় নিজেই আত্মসমর্পণ করেন।

শেয়ার করুন