দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান মিত্র বিএনপি_ উভয় পক্ষেই রাখা হচ্ছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সংকট থেকে উত্তরণের জন্যই এ কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।
জানা গেছে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাঁচাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও দেশ-বিদেশে চলছে দেন-দরবার। আবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটও ধরে রাখতে চায় জামায়াত। সে জন্য বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা জানান, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের যে কোনো মূল্যে বাঁচাতে মরিয়া দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এ জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে না যাওয়ার গোপন সমঝোতার একটি চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি জোটের মিত্র বিএনপির সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চূড়ান্ত রায় সামনে রেখে আন্দোলনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি সরকারের শীর্ষমহলের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছেন জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা। সেক্ষেত্রে বিএনপিসহ শরিকদেরও আস্থায় থাকতে চায় দলটি। যদিও জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিতেও সন্দেহ অবিশ্বাসের কমতি নেই। কারণ এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের কয়েকশ নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কুষ্টিয়ায় গত ৩১ ডিসেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য নওশের আলী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রকাশ্যে যোগদানের ঘোষণা দেন। জামায়াতের এই নেতা কুষ্টিয়া মোটরযান শ্রমিকদেরও নেতা। সম্প্রতি পাবনার আতাইকুলা ইউনিয়ন শাখা জামায়াতের নায়েবে আমির রাজ্জাক হোসেন রাজার নেতৃত্বে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের মধ্যে কেউ যুদ্ধাপরাধী নেই। তাই তাদের যোগদানে আপত্তি করা হয়নি। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বাড়ি পাবনায়। অবশ্য জামায়াতের পক্ষ থেকে যোগদানের খবরগুলো অস্বীকার করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জামায়াত এখন নানা দিক দিয়ে চাপের মুখে। সাধারণ মানুষের কাছে তারা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। তাদের নেতারা যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি। তারা নাশকতাসহ নানা সহিংসতার মামলার আসামি। তাই নিজেদের বাঁচাতে কৌশল হিসেবে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন।’
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সহিংসতার অভিযোগে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের জন্য বলে আসছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে জামায়াত নেতাদের আওয়ামী লীগে যোগদানসহ ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির কারণে বিএনপিতে সন্দেহ বাড়ছে। বিএনপি জামায়াত ত্যাগ করলে আওয়ামী লীগ দলটিকে কাছে টেনে নেয় কিনা, এই ভয় বিএনপিতে আছে। কয়েকটি অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যেও এই সন্দেহ প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি নেতাদের একটি অংশের মতে, বিএনপি জামায়াতকে ছাড়লে আওয়ামী লীগ যে তাকে কাছে টেনে নেবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। যদিও মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হলে বিএনপির সামনে একমাত্র বাধা জামায়াত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়লেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসবে সরকার। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সরকারের এ মনোভাব জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াত ছাড়া না ছাড়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।