লোক দেখানো অভিযান

0
144
Print Friendly, PDF & Email

আগের দিন নূর হোসেনের বাড়ি থেকে মাইক্রোবাস উদ্ধারের পর গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকা থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) উদ্ধার করেছে পুলিশ। সাংসদ শামীম ওসমানের স্বজনদের মালিকানাধীন একটি গ্লাস ফ্যাক্টরিতে গাড়িটি পাওয়া গেছে।
সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেন প্রায়ই এই গাড়িটি ব্যবহার করতেন। গাড়িটির মালিক তাঁর ভাই নূরুজ্জামান। তবে সাতজন অপহরণ এবং লাশ উদ্ধারের এত দিন পর পুলিশের এসব অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ঘটনার আট দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নজরুলের পরিবার অভিযোগ করেছে, এসব লোক দেখানো অভিযান।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার জেএমএস গ্লাস ফ্যাক্টরিতে গতকাল দুপুরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি প্রিমিও টয়োটা কার (ঢাকা মেট্রো-গ ২৯৮৮৬২) উদ্ধার করে। পরে গাড়িটি রেকার দিয়ে পরীক্ষার জন্য নারায়ণগঞ্জে আনা হয়। ওই ফ্যাক্টরিটি সাংসদ শামীম ওসমানের দুই মামাশ্বশুর শামসুদ্দিন আহমেদ ও জালালউদ্দিন আহমেদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেএমএস গ্লাস ফ্যাক্টরির মহাব্যবস্থাপক আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, প্রায়ই গাড়িটি এখানে রাখা হতো। সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে গাড়িটি কারখানায় রাখা হয়। গাড়িটি কেন রাখতে দিতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আপনারা বুঝে নিন।’ জেএমএস গ্লাস ফ্যাক্টরিটি সাংসদ শামীম ওসমানের মামাশ্বশুর শামসুদ্দিন আহমেদ ও জালালউদ্দিন আহমেদের বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
পুলিশের এই অভিযানের বিষয়ে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বলেছেন, ‘পুলিশ লোক দেখানো অভিযান চালিয়েছে। কারণ, অপহরণের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে এই অভিযান চালাতে বলা হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ব্যবস্থা নিলে আমার স্বামীসহ অন্যদের জীবিত পাওয়া যেত।’
তবে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার খোন্দকার মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সন্দেহজনক বলেই গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে অপহরণের সাত দিন পর গত শনিবার এই মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে ১২ জনকে। সেখান থেকে একটি নীল রঙের মাইক্রোবাসও (ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-০৫১৭) জব্দ করে পুলিশ। পরে গাড়িটি পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হয়। তবে অভিযানকালে পুলিশ মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে আটক করতে পারেনি। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত এই মামলার এজাহারভুক্ত সাত আসামির কাউকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে এসব অভিযান নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীরও কোনো কৌতূহল নেই। গতকাল সারা দিন অনেকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এমনটাই বলেছেন। তাঁরা মনে করেন, অপহরণের পর লাশ উদ্ধারের সময় পর্যন্ত দৃশ্যত পুলিশের কোনো অভিযান ছিল না। আর লাশ উদ্ধারের পর হচ্ছে লোক দেখানো অভিযান। অথচ এরই মধ্যে পালিয়ে গেছে সব আসামি।
এদিকে, শনিবার গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনকে সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বাকিদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের আদালতে নিয়ে শুনানি শেষে এই রিমান্ডে নেওয়া হয়।
হঠাৎ করে এসব অভিযান এবং এর আগে কেন অভিযান চালাননি এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার আরও বলেন, যখন প্রয়োজন, তখনই অভিযান হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে।

শেয়ার করুন