অফিস আছে৷ অফিসের গাড়িও আছে৷ লোকবলও রয়েছে৷ প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার কাজও হচ্ছে৷ নেই শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে যাতায়াত৷ তারা অফিস করে না৷ তাদের সুবিধামত অফিস বানিয়ে রাজার হালে বসে বসে বেতন উত্তোলন করছে৷ অফিসের নামে বরাদ্ধকৃত অর্থ কিভাবে, কার নামে, কোন কাজ দেখিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে তাও দৃশ্যমান নয়৷ এ চিত্র দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ জিকে সেচ প্রকল্পের ভেড়ামারার প্রধান সাব-ডিভিশন’র৷ জিকে প্রজেক্টের নার্ভ হিসেবে খ্যাত জন গুরুত্বপূর্ন এই অফিসটি দর্ীঘ ৩ বছর ধরে তালাবন্ধ৷ যা দেখার কেউ নেই৷
জানা গেছে, সেচের মাধ্যমে উত্পাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সরকার ১৯৫৪ সালে ভেড়ামারায় দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ জিকে সেচ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়৷ ১৯৬৯ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়৷ সে সময় ইনটেক চ্যানেল সহ প্রধানখাল, শাখা খাল সহ গুরুত্বপূর্ন জল কাঠামোর রক্ষনাবেক্ষন, মেরামত এবং উন্নয়নের জন্য গঠন করা হয় ভেড়ামারা সাব-ডিভিশন৷ যা জিকে সেচ প্রকল্প’র নার্ভ হিসেবে পরিচিত৷ তত্কালীন সময় থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাকজমক পূর্ন ছিল এই সাব ডিভিশন৷ প্রতি বছর কোটি কোটি ব্যায় করা হয় এই সাব ডিভিশন থেকেই৷ কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অলসতার কারনে তারা ভেড়ামারার এই অফিসে আসে না৷ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০০৪ সালে গাজী ইয়ার আলী এই সাব ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে যোগদেন৷ তারপর আর কারও নাম নেই এই বোর্ডে৷ পরবর্তীতে কর্মকর্তারা অফিসে না এলেও কর্মচারীরা নিয়মিত অফিস করতো৷ কিন্তু দীর্ঘ আজ ৩ বছর ধরে তালাবন্ধ হয়ে পড়েছে জনগুরুত্বপূর্ন এই দপ্তরটি৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে এই অফিসের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন এসডি জুহুরুল ইসলাম৷ শাখা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান৷ এই অফিসের রয়েছে গাড়ি, ড্রাইভার, সার্ভেয়ার, চেইন ম্যান, কার্যসহকারী এবং পিয়ন৷ দর্ীঘ দিন ধরে তারা কেউ অফিস করে না৷ অথচ মাস শেষে এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে সরকারী কোষাগার থেকে বেতন সহ অনান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন৷ ইনটেক চ্যানেল, ১৫০ কিলোমিটার প্রধান খাল, প্রায় ৫’শ কিলোমিটার শাখা ক্যানেল সহ অনান্য ক্যানেল মেরামত এবং রক্ষনাবেক্ষনের জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা কিভাবে, কার নামে, কোন কাজ দেখিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে তারও কোন হিসাব নেই৷
ভেড়ামারা সাব-ডিভিশন’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এসডি জুহুরুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তিনি বসেন কুষ্টিয়া অফিসে৷ ভেড়ামারা সাব ডিভিশনের দায়িত্ব তার অতিরিক্ত৷ মাঝে মাঝে তিনি ভেড়ামারার সাব-ডিভিশনে অফিস করেন৷ এই অফিসের নামে ক্যানেল রক্ষনাবেক্ষন এবং মেরামতের নামে প্রতি বছর ১ কোটি টাকার কাজ হয়৷ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এসডি দের প্রতি দিনের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে হয় না৷
ভেড়ামারা সাব-ডিভিশন’র শাখা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, বিশাল অঞ্চল নিয়ে গঠিত ভেড়ামারা সাব ডিভিশন৷ আমি এবং স্যার সহ অফিসের ২ জন কার্যসহকারী তামান্না খাতুন, সুজন, চেইন ম্যান মুঞ্জুর এবং অফিস পিয়ন রেহান নিয়মিত ভেড়ামারায় অবস্থিত সাব ডিভিশনে অফিস করছি৷
জিকে সেচ প্রকল্প কুষ্টিয়া’র প্রকল্প পরিচালক ওবাইদুর রহমান বলেছেন, লোকবলের অভাবে ভেড়ামারা সাব ডিভিশনের অফিসটি এখন বন্ধ৷ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ ভেড়ামারায় অফিস করে না৷ তারা এখন কুষ্টিয়ার অফিসে বসে৷ তবে অচিরেই সাব ডিভিশন অফিসটি সচল করা হবে৷