ফেনসিডিল খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে গাজীপুরের স্কুলছাত্র দিপুকে অপহরণ করেছিল তার বন্ধুরা।
মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুরের সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র আকরামুল হক দিপুকে (১৫) অপহরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল থেকে তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার গাজীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দিপু ও পাঁচ অপহরণকারীকে হাজির করা হয়। এরপর দিপুকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হয়। দিপু গাজীপুর সদরের মীরেরগাঁও এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-৭ এর অধিনায়ক আশরাফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মীরের গাঁও এলাকার কবির হোসেনের ছেলে অপহরণকারী সবুজ ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং দিপুর পূর্ব পরিচিত ও এলাকার বড় ভাই।
সবুজ গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকাল ৪টার দিকে দিপুকে ফেন্সিডিলের তিনটি বোতল আনার কথা বলে কোনাবাড়ি যেতে বলে, এজন্য সবুজ তাকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও ভাড়া করে দেয়।
কোনাবাড়িতে মীরেরগাঁও এলাকার আব্দুস সামাদ সরকারের ছেলে এরশাদ (২৫) দীপুর জন্য ফেনসিডিলের প্যাকেট নিয়ে অপেক্ষা করছে বলে জানায় সবুজ।
কোনাবাড়ি গেলে এরশাদ ও তার কয়েকজন সহযোগী দিপুকে একটি প্রাইভেট কারে ওঠায় এবং চেতনানাশক মিশিয়ে একটি এনার্জি ড্রিংক খেতে দেয়।
দিপু এনার্জি ড্রিংক খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে আশুলিয়ার জামগড়া ও পরে টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে নিয়ে যায়।
অধিনায়ক আশরাফুর রহমান জানান, পরে এরশাদ মোবাইল ফোনে দীপুর মা আলেয়া বেগমের কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
এ ঘটনার পর বুধবার (৩০ এপ্রিল) দীপুর চাচা নজরুল ইসলাম জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি ও উত্তরার ৭-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে অভিযোগ করেন।
পরে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে কৌশলে বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে সালনা এলাকা থেকে প্রথমে সবুজকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওইদিন সন্ধ্যায় কালিহাতি উপজেলার পাইকপাড়া ও বল্লা এলাকা থেকে অপর অপহরণকারী গাজীপুরের মীরেরগাঁও এলাকার সামাদ সরকারের ছেলে মো. এরশাদ (২৫), রাজবাড়ি সদরের কোমড়পাড়ার খন্দকার সামসুল হকের ছেলে খন্দকার আজিজুর রহমান (৩৪), নীলফামারী সদরের ডুবাছুবির বোরহান উদ্দিনের ছেলে মো. ইসমাইল মিয়া (২০) ও একই এলাকার মো. নজরুল ইসলামের ছেলে আরশাদুলকে (২০) আটক এবং দিপুকে উদ্ধার করা হয়।
এরশাদের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মাদক ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
অপহরণকারীদের কথামতো দিপুর পরিবার মো. এরশাদের কাছে বিকাশের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা পাঠায় বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
অপহরণের দুদিন পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তরার ৭-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা টাঙ্গাইল থেকে দিপুকে উদ্ধার করে এবং অপহরণে জড়িত অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করে।
প্রেস ব্রিফিং শেষে দিপুকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা আলেয়া বেগম।
প্রেস ব্রিফিংয়ে দিপু জানায়, তার বাবা নজরুল ইসলাম মালয়েশিয়া প্রবাসী। সবুজ তার পূর্ব পরিচিত থাকায় তার কথামতো সে কোনাবাড়ি যায়। সেখানে সবুজের সহযোগী এরশাদ তাকে প্রাইভেটকারে উঠতে বলে। ওঠার পর তাকে এনার্জি ড্রিংক খেতে দেয়া হয়। এনার্জিড্রিংক খাওয়ার পর সে অচেতন হয়ে পড়ে।