আওয়ামী লীগে স্থবিরতা, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বিএনপির, উচ্ছ্বসিত জাপা

0
396
Print Friendly, PDF & Email

সুনামগঞ্জের তৃণমূলের রাজনীতিতে বড় তিনটি দলের চিত্র তিন রকম। সতের বছরের পুরনো জেলা কমিটি নিয়ে ভঙ্গুর সাংগঠনিক অবস্থায় পতিত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে যুগ পুরনো কোন্দলের কারণে স্থবিরতা বিরাজ করছে দলটিতে। অপরদিকে, দলীয় কোন্দল নিরসন ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্প্র্রতি ভেঙে দেওয়া হয়েছে জেলা বিএনপির কমিটি। একাত্তর সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে একসময় তুমুল জনপ্রিয় জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি তরুণ নেতৃত্বের সুবাদে অনেকটাই উচ্ছ্বসিত। দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা নেতা-কর্মীরা ফের সক্রিয় হয়েছেন রাজনীতিতে। দলীয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে গঠিত হয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। ৫৩ সদস্যের কমিটির সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুজ জহুর ইন্তেকাল করেছেন। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান পৌর মেয়র আইয়ুব বখত জগলুলও কোন্দলের বলি হয়ে দলীয় পদ হারান। এরপর থেকে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলহাজ মতিউর রহমান ও নূরুল হুদা মুকুট। মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটির নয়জন পরলোকে, কেউ প্রবাসে আর বয়সজনিত কারণে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় অনেকেই। এদিকে, সাংগঠনিক স্থবিরতা ও কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি খ্যাত সুনামগঞ্জে গত উপজেলা নির্বাচনে ১০টির মধ্যে সাতটিতেই পরাজিত হয় দলটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র নেতা জানান, ১০/১২ জন মিলে ইচ্ছাখুশি মতো দল চালাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করার কারণে দলের ভরাডুবি হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান জানান, রাজনীতি এখন ব্যবসার সিঁড়িতে পরিণত হয়েছে। যে কারণে দলকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে অনেকেরই অনীহা। তিনি বলেন, নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে সবসময় ইতিবাচক ভূমিকা রেখে আসছি। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির জন্য তিনি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অসহযোগিতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করে বলেন, অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা নিজ নিজ স্টাইলে চলাফেরা করেন। সদর উপজেলায় দল একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে, যুবলীগ দিয়েছে অন্যজনকে। তিনি বলেন, বর্তমানে সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক অবস্থা, এর থেকে উত্তরণ না ঘটলে ভবিষ্যতে কোনো পটপরিবর্তন হলে দল কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। অপরদিকে, সুনামগঞ্জে দ্বিধা-বিভক্ত বিএনপির জেলা কমিটি সম্প্রতি বিলুপ্ত করে দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলহাজ ফজলুল আছপিয়া রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর জেলা কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী। তার নেতৃত্বে করা ৭১ সদস্যের কমিটিতে দ্বন্দ্বে জড়িত দুই পক্ষের প্রায় সমসংখ্যক প্রতিনিধি রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক ৬৫ দিনের মধ্যে ইউনিয়ন-উপজেলা কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের বাধ্য-বাধকতা রয়েছে আহ্বায়ক কমিটির ঘাড়ে। সব পক্ষের সমন্বয়ে কোন্দল-মুক্ত দল নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে বিএনপিতে। নাছির চৌধুরী বলেন, একটি ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গঠনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কলিম উদ্দিন মিলন বলেন, অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে সুনামগঞ্জ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। নতুন কমিটির নেতৃত্বে সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। এদিকে, সাবেক মন্ত্রী মেজর ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও পরবর্তীতে তার স্ত্রী মমতাজ ইকবালের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির দলীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন তরুণ রাজনীতিবিদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। শুরুতেই দলীয় কার্যক্রমে গতি সঞ্চারের উদ্যোগ নেন তিনি। নিবেদিতপ্রাণ জাপা নেতা-কর্মীরা ফের সংগঠিত হন পীর মিসবাহর নেতৃত্বে। ফলে সুনাগঞ্জের রাজনীতিতে একসময় তুমুল জনপ্রিয় জাতীয় পার্টিতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। সুনামগঞ্জ সদর আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, শান্তি ও সম্প্রীতির শহর সুনামগঞ্জের অতীত রাজনীতির ইতিহাসে জাতীয় পার্টির বিশাল ভূমিকা ছিল। সেই ধারাবাহিকতা বাজায় রাখতে দলকে শক্তিশালী ও জনমুখী করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সুনামগঞ্জে জাতীয় পার্টি এখন অনেক বেশি শক্তিশলী।

প্রতিবাদ : মঙ্গলবার ‘ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ৯ কারণ’ শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী ফ্যাঙ্ বার্তায় জানিয়েছেন, তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিতরাই ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাছাড়া সংবাদটিতে তার বক্তব্য হিসেবে ছাপানো অংশটি তার নয় বলে দাবি করেছেন।

শেয়ার করুন