চেনা উদ্যাপনটা নিয়মিতই দেখা যায়। তবে বিশেষ অর্জনের জন্য বিশেষ এক উদ্যাপন ভেবে রেখেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গ্যারেথ বেলের পাস থেকে বলটা জালে জড়াতেই ছুটে গেলেন মাঠের মাঝামাঝি কোনায়। মুখের সামনে দুহাত তুলে মেলে ধরলেন পাঁচ-পাঁচ দশ আঙুল। এরপর এক হাত নামিয়ে দেখালেন পাঁচ আঙুল। পা নাচিয়ে, শরীর দুলিয়ে চলতে থাকল পনেরো আঙুল দেখানোর খেলা। তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন বেল-পেপে-মডরিচরাও। ওই গোলেই মেসি-আলতাফিনিকে ছাড়িয়ে গেলেন রোনালদো, গড়লেন ইতিহাস। চ্যাম্পিয়নস লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড। ১৫ নম্বর গোলের উদ্যাপনে তাই ওই ‘ফিফটিন ড্যান্স’!
উদ্যাপনই বলে দিয়েছে, কীর্তিটার কথা ভালোভাবেই জানতেন রোনালদো। মাথায় না গেঁথে উপায়ও যে ছিল না! গত কিছুদিন এ নিয়ে কম কথা তো হয়নি! রোনালদোর উচ্ছ্বাস তাই ফুটে উঠেছে উদ্যাপনেই। তবে নিজের কীর্তির চেয়েও বেশি উচ্ছ্বসিত তিনি দল ফাইনালে ওঠায়, ‘জানতাম একটি গোল প্রয়োজন, গোলটি তাই খুব করে চাইছিলাম। তার মানে এই নয় যে গোল না পেলে অস্থির হয়ে যেতাম। বেলের পাসটা ছিল দারুণ, গোটা দলই আমাকে সহায়তা করেছে। রেকর্ড গড়ে আমি খুশি, তবে আরও বেশি খুশি শিরোপা জয়ের কাছাকাছি যেতে পারায়। বিশেষ করে ফাইনালটা যখন আমার নিজের শহর লিসবনে!’
দারুণ এক প্রতি-আক্রমণ থেকে বেলের অসাধারণ পাসই আসলে রেকর্ড গড়া গোলটির ভিত্তি। আরও একবার দুর্দান্ত গতিতে ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে পাস দিয়েছিলেন বেল। রোনালদোর কাজ ছিল স্রেফ গোলকিপার নয়্যারকে পরাস্ত করা। গোলের পর ছুটে এসে রোনালদোকে প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছেন বেলই। ম্যাচ শেষে সতীর্থের প্রশংসা বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারের কণ্ঠে, ‘এ জন্যই সে বিশ্বের সেরা ফুটবলার। ওর পাশাপাশি খেলা এবং ওর কাছ থেকে শেখাটাও সম্মানের। আরও একটি ম্যাচ বাকি আছে আমাদের, আশা করি আরও গোল করতে পারবে সে।’
রেকর্ডটি একধাপ সংহত করেছেন পরশুই, বায়ার্ন ডিফেন্স ও গোলকিপারকে বোকা বানানো দারুণ এক ফ্রি-কিকে। ১০ ম্যাচেই ১৬ গোল! চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরুই করেছিলেন এবার গ্যালাতাসারাইয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক দিয়ে। এফসি কোপেনহেগেন ও জুভেন্টাসের বিপক্ষে দুই লিগ মিলিয়ে গোল করেছেন তিনটি করে। প্রথম রাউন্ডেই ৯ গোল করে গড়েছেন রেকর্ড। পেছনে ফেলেছেন রুদ ফন নিস্টলরয়, ফিলিপ্পো ইনজাঘি, হার্নান ক্রেসপো ও জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের ৮ গোলের কীর্তি। পরে শেষ ষোলোতে শালকের বিপক্ষে দুটি করে চারটি, কোয়ার্টারের প্রথম লেগে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে আরও একটি গোল করে ছুঁলেন মেসি-আলতাফিনির রেকর্ড। আর পরশু তো উঠে গেলেন নতুন উচ্চতায়ই।
চ্যাম্পিয়নস লিগে সব মিলিয়ে করা গোলেও মেসির (৬৭) ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন রোনালদো (৬৬)। দুই অতিমানবের কাছে রাউল গঞ্জালেসের (৭১) রেকর্ড হারানো স্রেফ সময়ের ব্যাপার। রিয়ালের হয়ে এদিন আড়াই শ গোলের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন রোনালদো। ২৪৩ ম্যাচে ২৫০ গোল, ভাবা যায়!
সবাই যখন বিস্ময়ভরে তাঁর রেকর্ডের কথা ভাবছেন, রোনালদো ভাবছেন ফাইনালের কথা। প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো হোক বা চেলসি, সহজ হবে না, বলছেন রোনালদো, ‘আমরা লিসবনে যাব মাথা উঁচু করে, কিন্তু পা মাটিতেই রাখতে হবে। পারফরম্যান্সে প্রমাণ করেছি আমরা ফেবারিট। তবে প্রতিপক্ষ যে-ই থাকুক, ফাইনাল সব সময়ই ৫০-৫০। শিরোপা জিততে নিজেদের উজাড় করে দেব আমরা। নিজ শহরে আমি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাই।’ এএফপি, ওয়েবসাইট।
রিয়ালে রোনালদো
ম্যাচ গোল
২০০৯-১০ ৩৫ ৩৩
২০১০-১১ ৫৪ ৫৩
২০১১-১২ ৫৫ ৬০
২০১২-১৩ ৫৫ ৫৫
২০১৩-১৪ ৪৪ ৪৯
মোট ২৪৩ ২৫০
এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল
১৬
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
রিয়াল মাদ্রিদ
২০১৩-১৪
১৪
হোসে আলতাফিনি
এসি মিলান
১৯৬২-৬৩
১৪
লিওনেল মেসি
বার্সেলোনা
২০১১-১২
১২
ফেরেঙ্ক পুসকাস (রিয়াল, ১৯৫৯-৬০), জার্ড মুলার (বায়ার্ন, ১৯৭২-৭৩), রুড ফন নিস্টলরয় (ম্যান. ইউনাইটেড, ২০০২-০৩), লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা, ২০১০-১১), মারিও গোমেজ (বায়ার্ন, ২০১১-১২) ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (রিয়াল, ২০১২-১৩)