বিধি ভেঙে আলোচনায় মোদি

0
189
Print Friendly, PDF & Email

ভারতের সাত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চলের ১৪ কোটি ভোটার গতকাল বুধবার ৮৯টি আসনের রথী-মহারথী প্রার্থীদের ললাটলিখন নিশ্চিত করে দিলেন। প্রবল দাবদাহ উপেক্ষা করে বিপুল ভোটদানের মধ্য দিয়ে আরেকবার ভারতীয় গণতন্ত্রের মাহাত্ম্যকেও প্রতিষ্ঠা করলেন তাঁরা।
বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া মোটের ওপর সারা দেশের ভোট অবাধ ও শান্তিতে হয়েছে। তবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে আবারও আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
মোদিকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত গতকাল দিনের শুরুতেই। নিজের রাজ্য গুজরাটে ভোট দেওয়ার পরেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মোদি। সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, মা-ছেলের শাসন শেষ। দিল্লিতে বিজেপির সরকার গঠিত হতে চলেছে। এত দিন যা ভোট হয়েছে, তাতে তাঁদের সরকারের ভিত প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এবার যে ভোট হচ্ছে, তা মজবুত সরকার গঠন করবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে সেই আলাপচারিতায় মোদি সুকৌশলে হাতে ধরে রাখেন বিজেপির প্রতীক কাগজের তৈরি একটি ছোট পদ্ম ফুল।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মোদির বেশ কিছুক্ষণের এ আলাপচারিতা সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ামাত্র নড়েচড়ে বসে কংগ্রেস। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়, মোদি আদর্শ নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছেন। নির্বাচন কমিশনও সময় নষ্ট না করে বিজেপি নেতার বক্তব্যের ভিডিও চেয়ে পাঠিয়ে দুই ঘণ্টার মধ্যে নোটিশ পাঠায়। নোটিশে বলা হয়েছে, মোদির কথাবার্তার মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার, তিনি ভোটদান শেষে রাজনৈতিক ভাষণ দিয়েছেন, যার লক্ষ্য দেশব্যাপী ভোটারদের প্রভাবিত করা। নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের কর্মকর্তার প্রতিবেদনও চেয়ে পাঠায় এবং গুজরাট সরকারকে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী অভিযোগপত্র দায়েরের নির্দেশ দেয়।
গতকাল যে আসনগুলোতে ভোট হলো, দিল্লির মসনদ দখল করতে গেলে সেই ৮৯ আসনের সিংহভাগ দখল করতে হবে বিজেপিকে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ওই ৮৯টি আসনের মধ্যে বিজেপির দখলে ছিল মাত্র ২০টি। তার মধ্যে ১৫টিই ছিল মোদির রাজ্য গুজরাটে। ওই রাজ্যের মোট ২৬টি আসনের মধ্যে বাকি ১১টি পেয়েছিল কংগ্রেস। মোট ৮৯ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৭টি। সেই অর্থে সপ্তম পর্যায়ের ভোটে মূল লড়াই বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের। বিশেষ করে গুজরাটে, যেহেতু ওই রাজ্যে বিজেপি ও কংগ্রেস ছাড়া অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে।
উত্তর প্রদেশের অবস্থা কিন্তু গুজরাটের মতো এমন দ্বিদলীয় নয়। ২০০৯ সালের নির্বাচনে প্রধান চার রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিজেপির হাল ছিল সবচেয়ে করুণ। যে ১৪টি আসনে গতকাল ভোট হলো, সেগুলোর মধ্যে সেবার বিজেপির ভাগে পড়েছিল মাত্র একটি। লক্ষেৗতে জিতেছিলেন বিজেপির লালজি ট্যান্ডন। কংগ্রেস পেয়েছিল ছয়টি আসন, সমাজবাদী পার্টি চারটি ও বহুজন সমাজ পার্টি তিনটি। এবার ট্যান্ডনকে সরিয়ে বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং স্বয়ং দাঁড়িয়েছেন লক্ষেৗতে। সোনিয়া গান্ধীর ঘাঁটি রায়বেরিলি ছাড়া কংগ্রেসের আগে জেতা বাকি আসনগুলো ছিনিয়ে নিতে কোমর বেঁধেছে বিজেপি। মোদিকে সামনে রেখে বিজেপি যেভাবে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ ঘটাতে চাইছে, তাতে সফল হলে সমাজবাদী ও বহুজন সমাজ পার্টির জেতা আসনেও থাবা বসাতে পারে দলটি।
বিহারের সাতটি আসনের মধ্যে বিজেপির ছিল মাত্র দুটি, বাকি পাঁচটি পেয়েছিল জনতা দল (সংযুক্ত)। এবার দুই দলের জোট নেই। লড়াইও ত্রিমুখী। পাঞ্জাবের ১৩টি আসনে কংগ্রেসকে লড়তে হচ্ছে বিজেপি-অকালি দলের জোটের বিরুদ্ধে। গতবার অকালি দল পেয়েছিল চারটি আসন। বিজেপি এবার জোটের আসন দ্বিগুণ করতে চায়। অন্ধ্র প্রদেশের ভাগাভাগির রেশ এই প্রথম অনুভূত হবে ১৭টি কেন্দ্রে। এই রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে গতবার কংগ্রেস পেয়েছিল ৩২টি। এবার বিজেপির জোটসঙ্গী তেলেগু দেশম। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতিও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত না মিলিয়ে একা লড়ছে।
সেই অর্থে এই পর্যায়ের ভোটে রথী-মহারথীদের ছড়াছড়ি। তাঁদের মধ্যে আছেন গুজরাটের বদোদরায় নরেন্দ্র মোদি, গান্ধীনগরে লালকৃষ্ণ আদভানি, রায়বেরিলিতে সোনিয়া গান্ধী, লক্ষেৗতে বিজেপির রাজনাথ সিং ও কংগ্রেসের রীতা বহুগুণা যোশী, কানপুরে বিজেপির মুরলি মনোহর যোশী ও কংগ্রেসের শ্রীপ্রকাশ জয়সোয়াল, বিহারের মাধেপুরায় সংযুক্ত জনতা দলের শারদ যাদব, পাঞ্জাবের অমৃতসরে বিজেপির অরুণ জেটলি, আনন্দপুর সাহেব থেকে কংগ্রেসের অম্বিকা সোনি, ঝাঁসিতে বিজেপির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতী।

শেয়ার করুন