জাফরুল্লাহর ভুল স্বীকার, মাহফুজ উল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা

0
150
Print Friendly, PDF & Email

খবর > বাংলাদেশ > জাফরুল্লাহর ভুল স্বীকার, মাহফুজ উল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা
জাফরুল্লাহর ভুল স্বীকার, মাহফুজ উল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বিচারাধীন বিষয় নিয়ে টকশোতে মন্তব্য করায় ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চেয়েছেন সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের সেক্রেটারি জেনারেল মাহফুজ উল্লাহ। একই অভিযোগে আদালতে দাঁড়িয়ে ভুল স্বীকার করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ।

ওই ঘটনায় মাহফুজ উল্লাহ, জাফর উল্লাহ ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে কি হবে না সে বিষয়ে আগামী ১২ জুন আদেশের দিন রেখেছে ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ তারিখ নির্ধারণ করে।

এদিন শুনানিতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের পক্ষে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান এবং মাহফুজ উল্লাহর পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম অংশ নেন। নিজেই শুনানিতে অংশ নেন ডা. জাফরুল্লাহ।

ফাইল ছবি ফাইল ছবি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের পক্ষে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে রাত ১১টায় ‘মুক্তবাক’ নামক টকশোটি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল। অনুষ্ঠানটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করার উপায় ছিল না। তবে পরে স্ক্রলে অনুষ্ঠানটির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
শুনানিতে এ আইনজীবী চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের পক্ষে দুঃখ প্রকাশ করেন।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “আপনারা দেখেছেন, মামলা চলাকালে শাহবাগ চত্বরে কয়েক মাস ধরে কিভাবে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, দাবি উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা চলছে, এমন অবস্থায় দুদিন আগেও শাহবাগ চত্বরে শাস্তি নির্ধারণের দাবি উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা পর্যন্ত এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন।”

এসময় ট্রাইব্যুনালের এক বিচারপতি বলেন, “রাজনীতিবিদদের কথা বাদ দেন। তারা অনেক জায়গায় অনেক কথা বলেন।”

জাফরুল্লাহ বলেন, “আমি কোনোভাবেই আদালত অবমাননা করিনি, বরং আদালতের সম্মান বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। বিচারপতি হাসনাইন সাহেব যদি সাক্ষ্য দিতে পারতেন তাহলে মানুষের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সুযোগ থাকত না।”

এসময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমরা কি সুপ্রিম কোর্টের একজন বর্তমান বিচারপতিকে নির্দেশ দিতে পারি? সালাহউদ্দিন কাদের সাহেবের মামলায় চারজন সাক্ষ্য দিতে চেয়েছে এবং চারজনই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

“আপনারা তো জানেন না, খোঁজ রাখেন না। না জেনেই মন্তব্য করে ফেলেন। না জেনে কোনো কথা বলবেন না। আপনারা জ্ঞানী লোক, আমরা আপনাদের সম্মান করি। আপনাদের কথা মানুষ শুনে এবং অনুসরণ করে।”

টকশোর কথা উল্লেখ করে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “আপনি ওইখানে উল্লেখ করেছেন ‘হাসনাইন নামের জজ সাহেব’, সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র বিচারপতিকে কি এভাবে সম্বোধন করতে পারেন? এছাড়া বলেছেন ‘আমাদের মোজাম্মেল সাহেবের কাছে আবেদন করেছে’, আপনি আপনার ড্রয়িং রুমে এভাবে বলতে পারেন। কিন্তু প্রকাশ্যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে এভাবে সম্বোধন কিভাবে করেন? উনি কি আপনার ক্লাসমেট?”

এসময় ডা. জাফরুল্লাহ ভুল স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালকে বলেন, “আপনারা প্রসিকিউশনের আদালত অবমাননার দাবি খারিজ করে দিয়ে আমার বাক স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করবেন আশা করি।”

এরপর সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, “অনুষ্ঠানে তিনি (মাহফুজুল্লাহ) নিজে থেকে কিছু বলেননি। জাফরুল্লাহ সাহেব যা বলেছেন সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি কথা বলেছেন। তবে আদালত অবমাননার অভিপ্রায় তার ছিল না। উনার বক্তব্যে যদি আদালত অবমাননা হয়ে থাকে তবে সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”

শুনানিতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জবাবের ওপর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, “একটি অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে অথচ তার কোনো নীতিমালা থাকবে না? একটি গণমাধ্যমে কোন বিষয়ে কতটুকু বলা যাবে, কিভাবে বলা যাবে তার একটি নীতিমালা থাকে। সেই সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই এসব অনুষ্ঠানে অতিথিরা অংশ নেন।

“ট্রাইব্যুনালের বিচারাধীন একটি বিষয়ে টকশো হবে অথচ তার কোনো লে-আউট থাকবে না, তা হতে পারে না।”

ডা. জাফরুল্লাহর জবাবের প্রসঙ্গ টেনে তুরিন আফরোজ বলেন, আদালত অবমাননার নোটিশে তিনি মর্মাহত হয়েছেন। জবাবে তিনি লিখেছেন,‘মুক্তিযোদ্ধারা বিচারকে ভয় পায় না। তবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যা অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়’। তার মানে আদালত অবমাননার নোটিশে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

এই প্রসিকিউটর বলেন, “বাক স্বাধীনতা মানে এই নয় যে, আমার যা খুশি তাই বলব। বাক স্বাধীনতা আমাদের সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যা ইচ্ছা তাই বলা মানে বাক স্বাধীনতা নয়, বাক স্বাধীনতা মানে বাক সেচ্ছাচারিতা নয়।”

সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর জবাবের শুনানিতে তুরিন বলেন, “অনুষ্ঠানে তিনি ডা. জাফরুল্লাহ সাহেবের কথার প্রসঙ্গ টেনে কথা বলেছেন বলে জবাবে দাবি করেছেন। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ সাহেব কি বক্তব্যের কোথাও বলেছেন, অন্য মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দেয়া হলেও এ মামলায় (সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীরর মামলা) সাফাই সাক্ষ্য দেয়া হয়নি? জাফরুল্লাহ সাহেব এ কথা বলেননি। তাহলে মাহফুজুল্লাহ সাহেব এ কথা কোথায় পেলেন?”

তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আবেদন জানান তুরিন আফরোজ।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আদালত বরাবর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কর্তৃপক্ষসহ আটজনকে বিবাদী করে অভিযোগ দাখিল করা হয়।

এরা হলেন- চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী পরিচালক, হেড অব প্রোগ্রাম, ‘মুক্তবাক’ অনুষ্ঠানের ওই পর্বের প্রযোজক, অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আলোচক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের সেক্রেটারি জেনারেল মাহফুজ উল্লাহ।

প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম ও তুরিন আফরোজসহ কয়েকজন প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে এ অভিযোগ জমা দেন।

ট্রাইব্যুনাল আইনের ১১ এর ৪ ধারায় কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে আদেশ চাওয়া হয় প্রসিকিউশনের আবেদনে।

তাদের আবেদনে বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে প্রচারিত ‘মুক্তবাক’ অনুষ্ঠানে দুই আলোচক দাবি করেন যে, অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অধিকার খর্ব করা হয়েছে। এতে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হবে।

ওই অনুষ্ঠানে প্রচারিত বক্তব্য ‘পক্ষপাতদুষ্ট, ভিত্তিহীন, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রসূত’ উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অপপ্রচার ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই ওই মন্তব্য করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রসিকিউশনের আবেদনে।

গত ৬ নভেম্বর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের বিরুদ্ধে আনিত আদালত অবমাননা অভিযোগের জবাব দাখিল করেন তাদের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে গত ১০ অক্টোবর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজেই ট্রাইব্যুনালে তার লিখিত জবাব দাখিল করেন এবং নিজেই শুনানি করতে আবেদন করেন।

গত ২৮ নভেম্বর মাহফুজ উল্লাহকে ১ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার জন্য আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।ওইদিন সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহকে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আদেশ অনুযায়ী তিনি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষ হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন।

পরে ২৪ ডিসেম্বর শুনানির দিন থাকলেও আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ওইদিন দুপুর ২টার মধ্যে হাজির হওয়ার আদেশ দেয়া হলে আবারো আদালতে হাজির হন তিনি।

ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে মন্তব্য করায় অবমাননার অভিযোগে এর আগে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য সাংসদ হামিদুর রহমান আযাদকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া দলটির ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মো. সেলিম উদ্দিনকে দেয়া হয় এক দিনের কারাদণ্ড।

শেয়ার করুন