প্রতিবারের মতো আগামী বাজেটে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়কে জরিমানা নিয়ে সাদা করার সুযোগ থাকছে বলে ইঙ্গিত দিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর ধনী দেশেও অপ্রদর্শিত অর্থকে উৎসাহিত করা হয়। এই অপ্রদর্শিত আয়কে ছাড় না দিলে তা সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালয়েশিয়ায় চলে যাবে। ওই সব দেশে অপ্রদর্শিত আয়কে বেশ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আমেরিকাসহ ধনী দেশ এসব করছে। আমরা না করলে উন্নয়ন আটকে যাবে। তিনি বলেন, কোনো কোনো কাজের জন্য আমাদের হাত-পা বাঁধা আছে। আমাদের ফ্রিডম নেই আপনাদের মতো। কাস্টমস আইন নিয়ে দ্বিমুখী চাপে আমি, আমরা। কাস্টমসের রাজস্ব কমছে। আগামীতে আরো কমবে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ এনবিআর সম্মেলন কে গতকাল ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাথে আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ইআরএফ সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান, সাবেক সভাপতি খাজা মাঈনুদ্দীনসহ ইআরএফ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে রাজস্ব বোর্ডের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
করের আওতা আগামী বাজেটে বাড়ছে উল্লেখ করে রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্যের জন্য তিকর পণ্যসহ বেশ কিছু পণ্যের েেত্র কর বাড়ানো হবে। এ ছাড়া শহরাঞ্চলের বাড়ির মালিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবীসহ পেশাজীবীদের সঠিকভাবে করের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এইচএস কোডধারী পণ্যের সংখ্যা এক হাজার ৩৬২টি থেকে ১৭০টিতে নামিয়ে আনা হবে। এতে হয়তো ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব কমবে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তবে এটা পূরণ করা সম্ভব হবে।
রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী অর্থবছর থেকে বড় পরিবর্তন আসছে আয়কর ব্যবস্থায়। ব্যবসায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য করপোরেট ও ব্যক্তিকর সহনীয়পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। ব্যক্তিপর্যায়ে করকে নতুন আঙ্গিকে পুনর্বিন্যাস করা হবে। শুল্ক ও ভ্যাট পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের চিন্তা কমিয়ে আয়করকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। তিনি বলেন, শিল্পকে সহায়তা দেয়া এনবিআরের কাজ। বিনিয়োগ বোর্ড বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী করবে তাদের ব্যাপার। ১.১০ লাখ কোম্পানি জয়েন স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত আছে। এখন কর ফাঁকি দেয়ার জন্য সবাই গ্রুপ অব কোম্পানিজ করছে।
কর আদায়ে ও কর ফাঁকি রোধে এনবিআরের দুর্বলতা প্রসঙ্গে গোলাম হোসেন বলেন, এনবিআর একটি বড় প্রতিষ্ঠান। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কর আদায় করতে হলে যে লোকবল দরকার তা এনবিআরের নেই। সঠিকভাবে কর আদায় করতে হলে প্রতিটি কর সার্কেলে ইন্সপেক্টর দরকার হয়। কিন্তু অধিকাংশ কর সার্কেলেই তা নেই। প্রতিটি করাঞ্চলের জন্য ২৭ জন ইন্সপেক্টর দরকার হলেও এখন রয়েছেন সাতজন করে। ফলে তাদের পে অফিসের কাজ শেষ করে মাঠপর্যায়ে গিয়ে কর আদায় করা সম্ভব হয় না। আর কর ফাঁকি রোধে এনবিআর কারো বিরুদ্ধে মামলা করলে সে েেত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। ফলে মামলা ঝুলে থাকে দীর্ঘ দিন। এভাবে ১০ থেকে ১২ হাজার মামলায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আটকে আছে কর ফাঁকিবাজদের কাছে।
ডাক্তারসহ দেশের ৯০ ভাগ পেশাজীবী কর ফাঁকি দেয় উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের হাত-পা অনেক জায়গায় বাঁধা। আইনি জটিলতার কারণে আমরা কারো বিরুদ্ধে খুব সহজে ব্যবস্থা নিতে পারি না।
তিনি বলেন, তবে আমরা কাজ করছি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এখন এমন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে চাই যেখানে বাড়িওয়ালারা তাদের ভাড়ার টাকা তুলবে ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ভাড়াটিয়াও দেবে ব্যাংকের মধ্য দিয়ে। এতে করে আমরা খুব সহজে তাদের ভাড়ার টাকা থেকে ভ্যাট কেটে নিতে পারব। সারা দেশে ১.৬৭ লাখ বাড়ি আছে। কিন্তু কোনো রিটার্ন তারা দিচ্ছে না।
টিআইএনও তাদের নেই। তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সময় লাগবে।
বাজেটে স্থানীয় বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধার প্রস্তাব করে ইআরএফের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, বিনিয়োগসহায়ক পরিবেশ না থাকার কারণে স্থানীয় বিনিয়োগ একেবারে কমে গেছে। কর পেতে হলে বাজেটে স্থানীয় বিনিয়োগের েেত্র বিশেষ নজর দিতে হবে। পিপিপি নিয়ে বাজেটে বরাদ্দ শুধু এনবিআরের এসআরো মধ্যে ঝুলে আছে বলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। এটা যেন এসআরো মধ্যে ঝুলে না থেকে দৃশ্যমান হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার দরকার।