জার্গেনসেনকে নিয়ে…

0
738
Print Friendly, PDF & Email

ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে দ্রুত গাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে ডেকে মুশফিকুর রহিমকে থামানো গেল বটে, কিন্তু মুখে তালা।
কোচ শেন জার্গেনসেনের পদত্যাগের প্রসঙ্গ তুলতেই হাতজোড় করে বললেন, ‘এ নিয়ে এখন কিছুই বলব না। ভালো বললেও খারাপ
হবে, খারাপ বললেও খারাপ হবে। কোচ ফিরলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে তারপর দরকার হলে বলব।’
কাল সকালে শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে অনুশীলন করে ফিরে যাওয়ার সময় কোচের পদত্যাগ প্রশ্নে মুশফিক নিরাপদ দূরত্বেই হাঁটলেন।
কিন্তু এ দিন বিকেলে বাংলাদেশ অধিনায়ক আবারও জার্গেনসেন-সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন গুলশানের এক হোটেলে বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত
একটি অনুষ্ঠানে। এবারও একই কথা, ‘বোর্ড এ ব্যাপারে কিছু বলতে আমাকে কড়াভাবে নিষেধ করেছে।’
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তবু একই প্রশ্ন। মুশফিকও সমানে ‘ডাক’ করে যান। তবে জার্গেনসেনকে যে এখনই হারাতে চান না, একপর্যায়ে তা
বলেই ফেললেন, ‘বোর্ড পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। পাপন ভাই (বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান) আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব
এবং আশা করব উনি (কোচ) এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসবেন। আমাদের দলের জন্য সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
২০১৫ বিশ্বকাপের ১০ মাস আগে পুরোনো কোচের চলে যাওয়া এবং নতুন কোচের আগমনকে স্বাগত জানাতে পারছেন না দলের
অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড় আবদুর রাজ্জাকও, ‘আমার বিশ্বাস, বোর্ড এটা নিয়ে কোচের সঙ্গে কথা বলবে। বিশ্বকাপের আগে নতুন
কোচ নিতে নিতে তিন-চার মাস চলে যাবে। এরপর নতুন কোচের সবকিছু বুঝে ওঠার ব্যাপার আছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।’
সবার সঙ্গে মেশার ক্ষমতা, সবাইকে সমান চোখে দেখা এবং কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা দিয়েই ক্রিকেটারদের প্রিয় হয়ে ওঠেন
জার্গেনসেন। রাজ্জাকও বললেন, ‘দলটাকে খুব ভালো উজ্জীবিত করতে পারেন উনি। সবাইকে একই চোখে দেখেন, সবার সঙ্গে
সমানভাবে মেশেন। পাইবাস তো অনেক বড় কোচ। কিন্তু তাঁর সময়ে আমাদের সেভাবে কোনো কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। সে
তুলনায় জার্গেনসেন অনেক বেশি পরিশ্রমী।’
পেসার হিসেবে জার্গেনসেনের সঙ্গে একটু বেশিই মেশার সুযোগ পেয়েছেন আল-আমিন। কোচ চলে যাবেন, এটা মানতে পারছেন না
তিনিও, ‘জার্গেনসেন থাকলে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই লাভ। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সামনে আরেকটা বিশ্বকাপ। নতুন
কেউ এলে এত দ্রুত মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন হবে।’
ক্রিকেটারদের মনোভাব যখন এই, পদত্যাগী কোচের ব্যাপারে কী ভাবছে বিসিবি? পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে, নাকি থেকে যাওয়ার
অনুরোধ করা হবে জার্গেনসেনকে? কাল এসব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দিলেন না বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খান,
‘কোচের সঙ্গে এখনো কথা হয়নি। এসব বিষয়ে ফোনে কথা বলা ঠিকও নয়। কাল (আজ রাতে) উনি ঢাকায় আসবেন। তখন
সামনাসামনি আলাপ করব। তা ছাড়া বোর্ড সভাপতির সিদ্ধান্তের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।’
তবে কোচের ব্যাপারে পরিচালকদের নানা মন্তব্যের সমালোচনা এদিনও করলেন আকরাম, ‘এসব ব্যাপারে যা বলার আনুষ্ঠানিকভাবেই
বলা উচিত। ব্যক্তিগতভাবে কোনো কিছু না বলাই ভালো। সবারই মান-সম্মান আছে, ভাবমূর্তি আছে। আমার মনে হয় বোর্ড
আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটাই আমাদের বলা উচিত।’
আকরাম সরাসরি না বললেও জার্গেনসেনের ব্যাপারে বোর্ডে দুই রকম মত আছে বলে জানা গেছে। এক পক্ষ ২০১৫ বিশ্বকাপের আগ
পর্যন্ত তাঁকে রেখে দেওয়ার পক্ষে। অল্প সময়ে ভালো একজন কোচ খুঁজে পাওয়াকে এই পক্ষ বলছে ‘চ্যালেঞ্জিং’। সামনে বড় একটা
পরীক্ষা রেখে এ রকম ঝুঁকিতে যাওয়ার পক্ষে নন এই মতের অনুসারী বোর্ড পরিচালকেরা। আরেক পক্ষের মত, যে কোচ আবেগের
বশবর্তী হয়ে হঠাৎ পদত্যাগ করে বসেন, তাঁর চলে যাওয়াই ভালো। তা ছাড়া টিম ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তনের পরিকল্পনা তো এমনিতেও
ছিল। তখন প্রধান কোচের পদে হাত দেওয়ার জোরালো চিন্তাভাবনা না থাকলেও এখন না হয় সেটাও হলো। পরিচালকদের এই পক্ষের
মত, ভারত সিরিজের জন্য আপৎকালীন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে লম্বা সময়ের জন্য একজন হাই প্রোফাইল কোচ নেওয়া হোক।
জার্গেনসেনের আজ রাতে ঢাকায় ফেরার কথা থাকলেও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষ করে বোর্ড সভাপতি কবে ফিরবেন, সেটা কেউই
জানাতে পারলেন না। ঢাকা থেকে দুজন পরিচালক ফোন করেও পাননি সভাপতিকে। জার্গেনসেনকে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করা হবে
নাকি ‘ধন্যবাদ’ বলে গৃহীত হবে পদত্যাগপত্র, তা জানতে তাই আরেকটু অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

শেয়ার করুন