‘ইয়াবা সিন্ডিকেটের’ একটি তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১২ সালের নভেম্বরে প্রথম ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা করা হয়। ওই তালিকায় নাম ছিল ৫৫৪ জনের। খবর বিডিনিউজ।
সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের তৈরি করা তালিকা সমন্বয় করে এবার মাঠে নেমেছে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২শ’র বেশি।
ইয়াবার বিরুদ্ধে এই তৎপরতার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে, ইয়াবা নির্মূল করতে হবে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে।
তালিকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তালিকা সংশ্লিষ্টদের হাতে রয়েছে। তারা কাজ করছেন।
ইয়াবা হলো মেথাফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণ। মাদকটি একাধারে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র আক্রমণ করে। এই মাদক সেবন করলে মস্তিষ্কে এক ধরনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, কিন্তু তা স্থায়ী হয় না। এরপর আসে মানসিক অবসাদ। ঘুম হয় না। আচরণে ও চিন্তায় বৈকল্য দেখা দেয়। ন্যায়-অন্যায়বোধ লোপ পায়। মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।
সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি করা ইয়াবা সিন্ডিকেটের এই তালিকায় কক্সবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুর রহমান বদির কয়েকজন আত্মীয় ও সহযোগীর নাম রয়েছে।
এতে সাংসদ বদির আপন ভাই মো. আব্দুল শুক্কর, মৌলভী মুজিবুর রহমান, দুই সৎভাই আবদুল আমিন ও ফয়সাল রহমানের নাম রয়েছে। এছাড়া বদির বেয়াই আখতার কামাল, শাহেদ কামাল, মামা হায়দার আলী, মামাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল এবং ভাগ্নে নীপুর নাম এসেছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ রাশেদ, টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আহমেদ, খুরশিদা করিম, জাবেদ ইকবাল, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আলী আহমদ, আবু বক্করের নামও রয়েছে তালিকায়।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বলেন, তালিকায় নাম থাকার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। মনে হয় কোনো ভুল হয়েছে। তিনি দুইবার নির্বাচিত এমপি। প্রধানমন্ত্রী ইয়াবার বিরুদ্ধে। তিনিও বিরুদ্ধে। ইয়াবা নির্মূল তিনিও চান।
স্থানীয় কিছু সাংবাদিক তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ‘অসুস্থ’ হয়ে বর্তমানে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল ভর্তি থাকা এই সাংসদ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা
বাংলাদেশে ইয়াবা মূলত প্রবেশ করে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলার অন্তত ৪৫টি রুট দিয়ে। সম্প্রতি এসব এলাকায় নজরদারি জোরদারের পাশাপশি নতুন ক্যাম্পও বসানোরও উদ্যোগ নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডর কর্নেল খন্দকার ফরিদ হাসান বলেন, এ এলাকায় ২৩টি ক্যাম্প আছে। নতুন আরো ১৫টি ক্যাম্প স্থাপন করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাদকের ব্যাপারে জিরো টলার্যান্স দেখাতে বলায় নতুন ক্যাম্প স্থাপনের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে।
বিজিবি টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়ানের পরিচালক লে. কর্নেল মো. আবুজার আল জাহিদ জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৪ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটা জুড়েই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের যে তালিকা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে অনুযায়ী অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানের কারণে আগের তুলনায় ইয়াবা ধরাও পড়ছে বেশি। প্রধানমন্ত্রী ইয়াবা নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছেন। যত প্রভাবশালীই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি জেলা পুলিশকে রি-অ্যারেঞ্জ করা হচ্ছে।’