আমাদের চলচ্চিত্রের এই সময়ের অন্যতম সফল অভিনেত্রী নিপুন। চলতি সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ছবি ‘মায়ের মমতা’। ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকেই অভিনয় নিয়ে পার করছেন ব্যস্ত সময়। চলচ্চিত্রের নানা বিষয় নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে। কালের কণ্ঠ অনলাইনের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন জিয়াউল জিয়া।
প্রশ্ন : কেমন আছেন? কোথায় আছেন?
নিপুন : ভালো আছি। এখন আমি উত্তরায় অবস্থান করছি জি সরকারের ‘লাভ ২০১৪’ ছবির শুটিংয়ের জন্য। এই ছবিতে আমার বিপরীতে রয়েছেন শাকিব খান। নিটোল ভালোবাসার গল্পের ছবি এটি।
প্রশ্ন : আমাদের ছবির মান সম্পর্কে বলুন।
নিপুন : আমাদের ছবির মান এখন অনেক বেড়েছে বলেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে চলচ্চিত্রশিল্প। দর্শক হলে যাচ্ছে। আর ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ আমাদের সিনেমা এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। এখন আমাদের ছবির কালার এবং আনুসাঙ্গিক বিষয় দর্শকদের মন কাড়তে পারছে। যে কারণে ছবির বাজার এখন চাঙ্গা। আর কিছু মানসম্মত সিনেমা হলও তৈরি হয়েছে। সেখানে দর্শক পপ কর্ন খেতে খেতে ছবি উপভোগ করতে পারছেন। আমার মতে মান বেড়েছে, আরো বাড়বে। চলচ্চিত্র আবার তার স্বর্ণযুগ ফিরে পাবে।
প্রশ্ন : ডিজিটাল ছবি তৈরির ট্রেন্ডের কোনো বাজে দিক চোখে পড়েনি আপনার?
নিপুন : পড়েছে। অনেকেই ডিজিটাল ছবি নির্মাণ করছেন নিম্নমানের ডিজিটাল ক্যামেরায়, কম বাজেটে। এসব ছবি দেখে দর্শকরা হতাশ হচ্ছেন। যে কারণে ছবির মানও খারাপ হচ্ছে। কোনো দর্শক যদি প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ছবি দেখার ইচ্ছে নিয়ে হলে গিয়ে এরকম কোনো নিম্নমানের ছবি দেখেন তবে তারা ভাববেন চলচ্চিত্র আগের যায়গায়ই আছে। এতে করে ফের হয়তো চাপের মুখে পড়বে চলচ্চিত্রশিল্প।
২০১৬ সালে আমাদের ছবি সবদিক থেকে মান অর্জন করবে : নিপুন
প্রশ্ন : আপনি যেসব ডিজিটাল ছবিতে অভিনয় করছেন সেগুলোর মান কেমন?
নিপুন : অবশ্যই ভালো। নিজের ছবি বলে বলছি না। আমি তো থার্টি ফাইভ ক্যামেরায়ও কাজ করেছি। আমি যেসব ছবিতে কাজ করছি সেসব ছবিতে খুবই প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানরা কাজ করছেন। যে কারণে আমাকে ডিজিটালের মন্দ দিকটা স্পর্শ করতে পারেনি। আর ডিজিটাল ছবির কারণে এখন আমি শর্টটা কমপ্লিট করার পরই দেখতে পারছি কেমন হয়েছে। পছন্দ না হলে আরেকটা টেক দিতে পারছি। আগে তো এসব সম্ভব ছিল না। ডাবিংয়ের সময়ই শুধু কাজগুলো দেখতে পারতাম।
প্রশ্ন : ছবির সফলতার পেছনে কোরিওগ্রাফির ভূমিকা ব্যাপক। আমাদের চলচ্চিত্রের কোরিওগ্রাফির মান কেমন?
নিপুন : সম্প্রতি এই কোরিওগ্রাফি নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু হয়েছে। আগে এটাকে তেমন গুরুত্ব নিয়ে দেখা হতো না। এখন সবাই গানটা নিয়ে ভাবছেন, প্লান করছেন কি রকম কোরিওগ্রাফি হবে। তার পর শুটিংয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক দিনের হলেও কোরিওগ্রাফি বিষয়টা আমাদের কাছে নতুন। আমরা এ ক্ষেত্রে মাত্র শুরু করেছি। মান মোটামুটি। আরও ভালো হবে সামনে। আর ফিল্ম নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ বাণী হলো, ২০১৬ সালে আমাদের ছবি সবদিক থেকে মান অর্জন করবে।
প্রশ্ন : আমাদের ছবির কস্টিউম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। তার কি হবে?
নিপুন : হ্যা, ভালো ছবি তো তাকেই বলে যার সবকিছুই নান্দনিক। কস্টিউমে আমাদের প্রবলেম আছে কারণ আমাদের এখানে ‘কস্টিউম ডিরেক্টর’ পদে কেউ কাজ করেন না। যে কারণে আমাদের কস্টিউমের মান তেমন ভালো নয়। আমি এখন ছবির কাজে আমার ব্যক্তিগত মেকআপ আর্টিস্ট এবং ড্রেস ডিজাইনার মেনটেইন করি। আর আমি এর সুফলও পেয়েছি। কিন্তু এই দুজনকে কাস্ট করতে গিয়ে আমাকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। কারণ, অনেক পরিচালকই এটাকে বাড়তি খরচ হিসেবে দেখেন। সবাই যদি এরকম করতেন তাহলে ছবির মানও বাড়তো আর আমাকেও যুদ্ধ করতে হতো না।
প্রশ্ন : আপনি যখন ফিল্মে প্রবেশ করেন তখন আপনার সামনে কিছু হেভি ওয়েট নায়িকা ছিলেন। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আপনি টিকে গেলেন। কিভাবে সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন?
নিপুন : আমার ধৈর্য আমাকে টিকিয়েছে। আর আমি প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্ঠা করেছি। অভিনয়টা শেখার চেষ্ঠা করেছি। কারণ, একজন অভিনেত্রী শুরুতে গ্লামার দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারলেও পরবর্তীতে তাকে অভিনয়টা জানতেই হয়। তাই বলবো আমার শেখার অভ্যাসই আমাকে টিকিয়ে রেখেছে।
২০১৬ সালে আমাদের ছবি সবদিক থেকে মান অর্জন করবে : নিপুন
প্রশ্ন : নতুনদের কাজ আপনার কেমন লাগে?
নিপুন : বেশ ভালো লাগে। আমি তো নতুনদের সঙ্গেও কাজ করছি। তাদের উদ্যম আমি উপভোগ করি। তাদের জন্য সাধুবাদ রইল।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্রে আপনার শুরুর গল্পটা শুনব।
নিপুন : আমি আমেরিকায় সেটেলড ছিলাম। ২০০৬ সালে ঢাকায় বেড়াতে আসি। সেই সময় এফ আই মানিকের ‘পিতার আসন’ ছবির এক নায়িকা হঠাৎ করেই বাদ পড়েন। কয়েক দিন পরই শুটিং। পরিচালক মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন। সোহানুর রহমান সোহান তখন আমাকে মানিক ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেললেন। শুরু হল শুটিং। ছবিটাও হিট হলো। আমাকে নতুন নতুন ছবিতে কাস্ট করা শুরু হল। সেই থেকে একটার পার একটা ছবি করেই যাচ্ছি।