‘কালো বড় ব্যাগ খুলে ভিতর থেকে বাচ্চাটিকে বের করি আমরা। মুখ রুমাল দিয়ে তখনো বাঁধা অবস্থায় বাচ্চাটি অজ্ঞান ছিল। তারপর সবাই মিলে বাচ্চাটিকে অন্য একটি বস্তায় ভরি। বস্তার ভিতরে থাকতেই ডাক্তার বাচ্চাটির বুকের একটু নিচে এবং কোমর কেটে ফেলে। তারপর কিডনি দুটি কাঁচি দিয়ে কেটে স্যালাইনের ব্যাগের ভিতর ভরে এবং স্যালাইনের ব্যাগটা একটা বড় বাক্সে ভরে নিয়ে ওরা তিনজন দ্রত মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। কোথাও যেন রক্ত না পড়ে সে জন্য বাচ্চাটিকে বস্তায় ভরা হয়।
তারপর আমরা চারজন বস্তাভর্তি শিশুটির লাশ নিয়ে তেবাড়িয়া গ্রামের ফইলার বিলের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখি।’ মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোহিনুর আরজুমানের আদালতে উল্লাপাড়ার উধুনিয়া ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নানের ছেলে হারুনের (৬) হত্যাকারী ও কিডনি পাচার চক্রের সদস্য খলিলের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি থেকে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পাওয়া যায়। উপজেলার তরফবাড়িয়া গ্রামের কালু প্রামাণিকের ছেলে খলিল। আদালতে জবানবন্দি এবং সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে খলিল আরও ভয়ানক তথ্য জানান, ঢাকার সাভারের একটি চক্রের সঙ্গে শিশু হারুনের কিডনি বিক্রির জন্য তরফবাড়িয়া গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে চাঁদ আলী (২৫), মন্টু প্রামাণিকের ছেলে মতিন (৩০) ও দুলালের ছেলে দেলোয়ারের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি হয়। সে মোতাবেক শিশু হারুনকে অপহরণের জন্য কয়েক দিন আগে থেকে চেষ্টা করে। এ জন্য তারা কয়েকদিন দোকান থেকে চকোলেট-বিস্কুট কিনে দিয়ে শিশুটির মন জয় করে। ঘটনার দিন ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাড়ির পাশ থেকে মুখে রুমাল দিয়ে অজ্ঞান করে বস্তায় ভরে শিশুটিকে নিয়ে যায় তারা। এরপর বিষয়টি রাত ৮টায় তারা বিষয়টি আমাকে জানায়। রাত ২টার দিকে উধুনিয়া ব্রিজের নিচে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার পর দেখি আগে থেকেই সেখানে আরও তিনজন অপেক্ষা করছে। তারা ঢাকার সাভার থেকে এসেছিল। এদের মধ্যে একজন ডাক্তারও ছিল। তবে তাদের নাম আমি জানি না। কিন্তু আমার সঙ্গে থাকা তিনজন ওদের চেনে। সেখানে পৌঁছানোর পর ব্রিজের নিচে শিশুটির দুটি কিডনি কেটে স্যালাইনের প্যাকেটে ভরে সাভার থেকে আসা ওই তিনজন মোটরসাইকেলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আমাকে দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ওই সময় মাত্র ২০ হাজার টাকা দিতে চায়, তবে সেই টাকা আমি নেইনি। উল্লাপাড়া থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল জলিল জানান, ২২ এপ্রিল বিকালে উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নানের শিশুপুত্র হারুন নিখোঁজ হয়। ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী ফইলার বিলের একটি ডোবার কচুরিপানার নিচ থেকে কিডনিবিহীন অবস্থায় শিশুটির ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শিশুর বাবা আবদুল হান্নান একই গ্রামের তিনজনকে সন্দেহভাজন আসামি করে থানায় মামলা করেন। ২৭ এপ্রিল রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলার সীমান্তবর্তী মোহনপুর ইউপির কালিয়াকৈর এলাকা থেকে খলিলকে গ্রেফতার করা হয়।