পাঁচ বছরের আগে নির্বাচন হবে না বলে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলে থাকলেও আগামী দেড় থেকে দু’বছরের মাথায় মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। সরকারের এক নীতিনির্ধারক সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হাতে নতুন একটি প্রস্তাবনা তুলে দিয়েছেন। এ প্রস্তাবনায় আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিত রয়েছে।
তবে এ নির্বাচনের আগে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা হবে। এতে ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা’ নির্ধারণ করা হতে পারে। একতরফা নির্বাচনের দুর্নাম ঘোচানো এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপের কারণে আগাম নির্বাচনের কথা সরকারের শীর্ষ মহলে আলোচনা হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, সাম্প্রতিককালে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনাও প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি প্রতিকূলে না হলে প্রধানমন্ত্রীরও এ ব্যাপারে সম্মতি আছে বলে ওই সূত্র দাবি করেছে।
এদিকে, সকল দলের অংশগ্রহনে আরেকটি নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপ অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বোস্টনে এক সেমিনারে বলেছেন, বাংলাদেশে আমরা সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য চাপ অব্যাহত রাখব। এটা না করা হলে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানায়নি। অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে তারা আগের অবস্থানে এখনও অটল।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া প্রস্তাবনায় বিগত ৫ বছরের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম, কেলেংকারি ও বদনাম ঘুচিয়ে সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির পর মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎসহ যেসব সমস্যার কারণে জনগণের বড় একটি অংশ সরকারের ওপর বিক্ষুব্ধ সেগুলো খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে জনগণের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা কমিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ফলাফল ভালো করার জন্য প্রস্তাবনায় এসব উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ রয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটভুক্ত দলগুলোকে নির্বাচনের জন্য তৈরি থাকার কথা বলা হয়েছে।
আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রবীণ রাজনীতিক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রশ্ন রেখে বলেন, আগাম নির্বাচন সরকার কেন দেবে? জনগণ কী আগাম নির্বাচন চাচ্ছে? বিএনপি কী আগাম নির্বাচন দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পেরেছে? কিছুদিন পরেই বিএনপি আন্দোলন শুরু করবে এমন সম্ভাবনার কথা জানানো হলে সুরঞ্জিত বলেন, ওরা আগে আন্দোলন শুরু করুক; পরিস্থিতি কী হয় তখন দেখা যাবে।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নানা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে একটি নির্বাচন হয়ে গেছে এটা সত্য। কিন্তু আমরা ৫ বছরই থাকব এ ধরনের অহংবোধ থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে আইনগত বা সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সময় ও পরিস্থিতি বলে দেবে আরেকটি নির্বাচন কবে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবশালী এক উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে দেশের জনগণ এ মুহূর্তে নির্বাচন চাইছে না। নির্বাচনের পর সব পেশাজীবী নিজ নিজ পেশায় ফিরে গেছেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন।
কিন্তু দেশের সচেতন নাগরিক গোষ্ঠীসহ সবাই বলছে, আওয়ামী লীগের মতো গণতান্ত্রিক একটি শক্তি কেন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকবে! তিনি জানান, শুধু এই একটি মাত্র কারণে আগাম নির্বাচনের চিন্তা করতে হচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সময় হলেই বিএনপি কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
তবে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তার আগেই যদি সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয় তাতে দেশের ও জনগণের উভয়ের মঙ্গল হবে। তিনি বলেন, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, দেশের জনগণ এ নির্বাচন মেনে নিয়েছে। সময় হলেই জনগণ রুখে দাঁড়াবে।