কর্মসূচি দিয়ে সফল করতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি

0
134
Print Friendly, PDF & Email

দল গুছিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদারের কথা সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বলে আসছে বিএনপি। এজন্য বেশকিছু পরিকল্পনাও ঠিক করে দলটি। পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচিও দিচ্ছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। গতকাল দেশের সব উপজেলা, জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি থাকলেও অনেক জায়গায়ই তা পালন হয়নি।

এর আগে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে পর্যায়ক্রমে সারা দেশ সফরের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা নেতাদের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। গত ১ মার্চ রাজবাড়ী সফরও করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বাকি জেলা সফরে আর সেভাবে তোড়জোড় চোখে পড়েনি দলের মধ্যে। যদিও রাজবাড়ী সফরের পর পরই ঢাকার পার্শ্ববর্তী দুটি জেলায় সমাবেশ করার কথা ছিল খালেদা জিয়ার। এর পর ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, নাটোর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা ও যশোর সফরের পরিকল্পনা ছিল। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কয়েকটি জেলা সফরের পরিকল্পনাও ছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে চেয়ারপারসন এ মুহূর্তে তৃণমূল সফরে যাচ্ছেন না। তবে শিগগিরই সফর আবার শুরু হবে। সামনের মাসেই তা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতার নামেও মামলা রয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে নিয়ন্ত্রিত চলাফেরা করতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় আন্দোলন কর্মসূচি সফল করা সহজ মনে করছেন না তারা। চেয়ারপারসনের সফর নিয়ে তাই তেমন একটা আগ্রহ নেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে।
সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে সারা দেশের কমিটিগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনাও বিএনপির অনেক দিনের। কিন্তু এ নিয়েও উল্লেখ করার মতো কোনো তত্পরতা নেই। জানতে চাইলে মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুণ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে এ ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বক্তব্য, কমিটি পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেসব এলাকায় বিদ্যমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেখানে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশে এ কার্যক্রম চলতে থাকবে।

এর আগে ১৯ এপ্রিল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের কাউন্সিলে সারা দেশে কমিটি পুনর্গঠনের কথা ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সংগঠনে গতিশীলতা আনতে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এসব কার্যক্রম শেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গি দেন খালেদা জিয়া।

এদিকে তিস্তা অভিমুখে বিএনপির লংমার্চ কর্মসূচিতেও দলের শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণ সেভাবে ছিল না। যদিও কর্মসূচিকে সফল বলে দাবি করছে দলটি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আবহাওয়ার কথাটাও ভাবতে হবে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা গেছে, আমার মতে তা যথেষ্ট।’

নানা আলোচনা-সমালোচনার পর ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপি। প্রায় দেড় যুগ ধরে একই নেতৃত্বে চলছে মহানগর বিএনপি। ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের পর স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিও ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা ছিল দলটির। সে পরিকল্পনাও এখনো বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি বিএনপি।

এদিকে গত শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে উপজেলা, জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ। আগামী ৪ মে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে গণঅনশন কর্মসূচি পালনের কর্মসূচিও দেয়া হয়েছে।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ছিল। ১১টায় দু-তিনজন ছাড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাউকেই সমাবেশস্থলে দেখা যায়নি। সমাবেশ শুরু না হওয়ায় মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ?আসা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের গল্পগুজব করে সময় কাটাতে দেখা যায়। পরে অবশ্য সমাবেশ শুরু হলে জ্যেষ্ঠ নেতাদের আসন গ্রহণ করতে দেখা যায়। কিন্তু নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল এর আগের সমাবেশগুলোর তুলনায় কম।

শেয়ার করুন