সাতক্ষীরায় পৌর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আমিনুর রহমান ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। ছাত্রশিবির অভিযোগ করেছে, তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ সময় তাদের আরও সাত নেতা-কর্মীকে গুলি করে পুলিশ। তবে পুলিশের দাবি, আমিনুর নিহত হয়েছেন ‘বন্দুকযুদ্ধে’।
গতকাল রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে শহরের কামালনগর কবরস্থানের পাশে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুটি পিস্তল ও একটি গুলি উদ্ধার করেছে। গুলিতে আহতরা হলেন সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে ও সাতক্ষীরা শহরের আলিয়া মাদ্রাসার এইচএসসি পরীক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ (১৮), তালা উপজেলার মঙ্গলানন্দকাটি গ্রামের আবদুল হকের ছেলে আবদুস সবুর (১৭) ও আবদুল গফুর (২৪), খুলনার খানজাহান আলী থানার যুগীপুল এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে মো. আক্তার (২৮), খুলনার ফুলতলা এলাকার আবদুছ ছাত্তার ফরাজীর ছেলে খুলনা সিটি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আজিজুল ইসলাম, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পারশেমারী গ্রামের মো. মাহবুব গাজীর ছেলে ইমরান হোসেন (২৫) এবং শ্যামনগর উপজেলার আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে ও সাতক্ষীরা পৌর শিবিরের সভাপতি আবু তালেব (৩০)।
গুলিবিদ্ধ নূর মোহাম্মদ ও আবদুস সবুর বলেন, নিহত আমিনুরসহ তাঁরা ছয় ছাত্র শহরের কামালনগর কবরস্থানের পাশে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। মো. আক্তার ও আজিজুল ইসলাম তাঁদের ওখানে বেড়াতে এসেছিলেন। দুপুরের খাওয়া শেষে তাঁরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ গিয়ে তাঁদের ঘেরাও করে ফেলে। পরে তাঁদের আটক করে চোখ বেঁধে গুলি করে। এতে আমিনুর ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যরা আহত হন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহতদের মধ্যে দুজন বাঁ পায়ে ও পাঁচজন ডান পায়ের হাঁটু অথবা ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত আমিনুল গুলিবিদ্ধ হন বুকে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবু সাঈদ জানান, গুলিবিদ্ধ সবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। তাঁদের অবস্থা গুরুতর।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইনামুল হক বলেন, শহরের কামালনগর কবরস্থানের পাশে মো. মুকুল হোসেনের বাড়িতে শিবিরের ৫০-৬০ জন কর্মী গোপন বৈঠক করছেন—এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। বিকেলে তিনি ও ডিবির উপপরিদর্শক আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে পুলিশ ওই এলাকায় গেলে শিবিরের কর্মীরা তাঁদের লক্ষ্য করে প্রথমে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান, পরে গুলি ছোড়েন। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে শিবিরের কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটজনকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পথে আমিনুর রহমান মারা যান। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তল ও একটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত আমিনুল ও আবু তালেবের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় পাঁচটি করে মামলা রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল আবদুর রহমান, আবেদ আলী, নূরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ও ফারুক হোসেন সামান্য আহত হয়েছেন।
শিবিরের বিক্ষোভ আজ: সাতক্ষীরায় সংগঠনের নেতা হত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান গতকাল রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।