নারায়ণগঞ্জে দিনদুপুরে কাউন্সিলরসহ পাঁচজনকে অপহরণ

0
127
Print Friendly, PDF & Email

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে গতকাল রোববার দিনদুপুরে গাড়িসহ অপহরণ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়।
একই সড়ক থেকে প্রায় একই সময়ে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়ির চালক গাড়িসহ নিখোঁজ হয়েছেন।
কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের নেতা নূর হোসেন ও তাঁর লোকজন র‌্যাব পরিচয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আর চন্দন কুমার সরকারের ভাতিজা আইনজীবী অরুণাথ কুমার সরকার বলেছেন, তাঁর কাকা এবং কাউন্সিলর নজরুলকে বহনকারী গাড়ি দুটিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুপুরে প্রায় একই সময়ে তিনি বেরিয়ে যেতে দেখেন।
অবশ্য অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নূর হোসেন।
নজরুলকে অপহরণের খবরে তাঁর সমর্থকেরা বিকেলে সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক এবং রাতে সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা ১০-১২টি যানবাহন ভাঙচুর করেন।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে নজরুলের গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
কাউন্সিলর নজরুলের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর নূর হোসেনের ফুফাতো ভাই মোবারকের করা একটি মামলায় গতকাল নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে জামিন পান নজরুলসহ ১৫ জন। জামিন পাওয়ার পর বেলা পৌনে দুইটার দিকে নজরুল তাঁর বন্ধু লিটন, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শাখার সহসভাপতি তাজুল ইসলাম ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী মনিরুজ্জামানকে নিয়ে নিজের সাদা রঙের টয়োটা এক্স করোলা (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪-৯১৩৬) গাড়িতে করে ঢাকার দিকে রওনা হন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর। গাড়িটি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল। জামিন পাওয়া অন্য ব্যক্তিরা কিছুক্ষণ পর নজরুলসহ ওই পাঁচজনের মুঠোফোনে ফোন করে সেগুলো বন্ধ পান। বিষয়টি তাঁরা নজরুলের স্ত্রী সেলিনাকে জানান। তিনিও তাঁদের ফোন বন্ধ পান। অন্যত্র খোঁজ করেও খবর পাননি। বিকেল পাঁচটার দিকে সেলিনা ও নজরুলের ভাই আবদুস সালাম পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে বিষয়টি জানান।
সেলিনা ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীর সঙ্গে কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিনসহ বেশ কয়েকজনের বিরোধ রয়েছে। নূর হোসেন ও তাঁর লোকজন র‌্যাব পরিচয়ে তাঁর স্বামীসহ পাঁচজনকে অপহরণ করেছেন। তিনি স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চান। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
অপহূত অপর চারজনের উদ্বিগ্ন পরিবারগুলোও তাঁদের সন্ধান চেয়েছে।
কাউন্সিলর নূর হোসেন অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নজরুল অপহরণের বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। তবে এ ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।
নজরুল কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে একটি জোড়া খুনসহকমপক্ষে ১৫টি মামলা এবং অসংখ্য জিডি রয়েছে। ঢাকার ধানমন্ডি থানায় করা আইনজীবী বাবর আলী হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলেও উচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান।
নজরুল ও নূর হোসেন দুজনই আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের সমর্থক বলে পরিচিত। অপহরণের ঘটনা প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। নূর হোসেন ও নজরুল ইসলামের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে অপহরণ ও গুমের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমার মনে হয় না।’ তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করে কাউন্সিলর নজরুলকে উদ্ধারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, র‌্যাব এবং পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, নজরুল ও তাঁর চার সহযোগীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অপহূতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাইদ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নজরুলের অপহরণের সঙ্গে র‌্যাব সম্পৃক্ত নয়। অপহরণের ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি।’
এর আগে ১৬ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের ভূঁইগড় থেকে অপহূত হয়েছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। অপহরণের ৩৫ ঘণ্টা পর তিনি মুক্তি পান।
আইনজীবী ও তাঁর গাড়ির চালক নিখোঁজ: আইনজীবী অরুনাথ কুমার সরকার জানান, তাঁর কাকা চন্দন কুমার সরকার (৬০) দুপুরে গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-২৭-৩৩৩৭) নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের পাশে জালকুঁড়ি এলাকার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক ইব্রাহিম। কাউন্সিলর নজরুলের গাড়ির ঠিক আগে ওই গাড়ি বেরিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর কাকা বাড়ি বা শহরের সমবায় মার্কেটের চেম্বারে পৌঁছাননি। পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এতে তাঁরা বিষয়টি আইনজীবী নেতাদের জানান।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, তাঁরা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। বিষয়টি রাত সাড়ে নয়টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে জানানো হয়েছে।
চন্দন কুমার ও তাঁর গাড়ির চালক নিখোঁজের ঘটনায় অরুনাথ সরকার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
নজরুলের গাড়ি গাজীপুরে উদ্ধার: গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর হালডোবায় শালবন থেকে রাতে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি সাদা টয়োটা এক্স করোলা গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। জয়দেবপুর থানাধীন হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, শালবনের পাশে গাড়িটি পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পরে হোতাপাড়া ফাঁড়ির পুলিশ রাত আটটার দিকে গাড়িটি উদ্ধার করে। গাড়িতে নম্বর প্লেট ছিল না। তবে ঢাকা মেট্রো-গ ১৪-৯১৩৬ নম্বরের একটি গাড়ির কাগজপত্র ও জাহাঙ্গীর নামের একজনের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, যে স্থানে গাড়ি পাওয়া গেছে, তার আশপাশের শালবনে সারা রাত তল্লাশি করা হবে।

শেয়ার করুন