সরকারি অর্থের হরিলুট ফেঁসে যাচ্ছেন নর্থ-ওয়েস্টের খোরশেদ

0
167
Print Friendly, PDF & Email

সরকারি অর্থ হরিলুট করে ফেঁসে যাচ্ছেন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদ আলম। দুর্নীতির অন্তহীন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৪শে এপ্রিল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহের জন্য তাকেও চিঠি দিয়েছে দুদক। এ চিঠিতে তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভেড়ামারায় ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক হামিদুল হাসান স্বাক্ষরিত পত্রে যেসব রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: (১) সিরাজগঞ্জে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (দ্বিতীয় পর্যায়ে) নির্মাণের জন্য প্রাপ্ত সকল টেন্ডারের কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন রিপোর্টের কপি। (২) সিরাজগঞ্জে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (দ্বিতীয় পর্যায়ে) নির্মাণের জন্য প্রাপ্ত সকল টেন্ডারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট পাঠানো ক্লারিফিকেশনের কপি। (৩) সিরাজগঞ্জে ৭৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রাপ্ত সকল টেন্ডারের কারিগরি, আর্থিক মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনের কপি এবং বিভিন্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট পাঠানো ক্লারিফিকেশনের কপি। (৪) ভেড়ামারায় ৩৬০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রাপ্ত সকল টেন্ডারের কারিগরি, আর্থিক মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনের কপি এবং বিভিন্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট পাঠানো ক্লারিফিকেশনের কপি, (৫) উল্লিখিত কাজের জন্য অর্থায়নের উৎস, বাজেটসহ সরকারি অনুমোদনের কপি।
এএম খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- তিনি সিরাজগঞ্জ সিম্পল সাইকেল  পাওয়ার প্রকল্পের জন্য ফুয়েল পাইপ লাইন সিস্টেমটি বিধিবহির্ভূতভাবে কোন টেন্ডার ছাড়া সিএমসি’র অনুকূলে কার্যাদেশ দেন। মন্ত্রী, সচিব ও একনেক মিটিংয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বোঝানো হয় যে, মূল কন্ট্রাক্টরকে দিয়ে কাজটি না করলে অন্য কোন কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে কাজটি করানো যাবে না। পরে একই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকায় ৭৫ মেগাওয়াট কনভার্সন প্রকল্পটিও বিনা টেন্ডারে সিএমসি চায়নাকে দেয়া হয়। সেখানেও একই অজুহাত দেখানো হয়। অথচ খুলনায় অনুরূপ ৭৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল প্রকল্পের কাজ ৫৫ কোটি টাকা কমমূল্যে অন্য একটি কোম্পানিকে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। বায়ার্স ক্রেডিট অর্থায়নে সিরাজগঞ্জ (দ্বিতীয় পর্যায়ে) ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়নেও অনিয়ম করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ছয়টি কোম্পানি টেন্ডার জমা দেয়। এরমধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার পছন্দের দু’টি কোম্পানি ছাড়া বাকি চারটি কোম্পানির দরপত্র কোনরূপ ক্লারিফিকেশন ব্যতীত বাতিল করে দেন। এটি নজিরবিহীন ঘটনা।
একই ভাবে দেশী-বিদেশী যৌথভিত্তিতে বরগুনার আমতলীতে আমদানি নির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার আগেই যৌথ অর্থায়নের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিনা টেন্ডারে সিএমসি চায়নার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। খোরশেদ আলম বেশ কয়েকবার চীনে গিয়ে সিএমসি চায়নার আতিথেয়তা উপভোগ করেন। ২০১২ সালের শেষদিকে ভেড়ামারা প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। তার জন্য বিডার কারিগরি দরপত্র উপস্থাপন করে। গত বছরের শেষ দিকে কারিগরি দরপত্রের মূল্যায়ন করা হয়। টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি প্রতিবেদনে জানায়, কোন বিডারের কারিগরি দরপত্রই দরপত্রের শর্তসমূহ পূরণ করার যোগ্য নয়। তারপরও জাপানি কোম্পানি মারুবিনি ও সুমিতুমোকে রেখে প্রয়োজনীয় ভাইব্রেশন শর্ত পূরণ না করার অজুহাতে বাকি দু’টি দরপত্র (জাপানিজ-কোরিয়ান মিতস্যু পুসকো ও ডরু ফেলগয়েরার) কারিগরি প্রস্তাব বাতিল করে দেয়া হয়। অথচ জিই ও সিমেন্স যথাক্রমে পৃথিবীর প্রথম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম টারবাইন প্রস্তুতকারক। মারুবিনির দরপত্রে তিনটি মারাত্মক ডেভিয়েশন ছিল, যা প্রকল্প ব্যয়কে প্রভাবিত করে। তিনটি ডেভিয়েশনের একটিকে দেখেও উপেক্ষা এবং অন্য দু’টি ডেভিয়েশনকে দরপত্রের কোন রীতি-নীতির তোয়াক্কা না করে সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়। মারুবিনি টেন্ডারের শর্তে বর্ণিত ট্রান্সমিশন লাইন, সংশ্লিষ্ট খরচ ও অতিরিক্ত যন্ত্রপাতির দশ বছরের গ্যারান্টি দিতেও অস্বীকার করে। মারুবিনিকে কাজ দেয়ার জন্য এ দু’টি শর্তও সংশোধন করা হয়। বিউবো’র ঘোড়াশাল ৩ নাম্বার রিপিয়ারিং পাওয়ার প্ল্যান্টে সিএমসি, চায়না কর্তৃক দাখিলকৃত একক দরপত্রের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে উচ্চমূল্যে সিএমসি চায়নার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। খোরশেদ আলমের দুর্নীতি শুধু সিএমসি চায়নাকে ঘিরে নয়, মারুবিনির সঙ্গেও রয়েছে তার অবৈধ সম্পর্ক। মারুবিনিকে সম্প্রতি কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ঘুষ দেয়ার অভিযোগে কোম্পানিটিকে ৮৮ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হয়। মারুবিনির কালো তালিকাভুক্তির বিষয়টি অবহিত থাকার কারণেই খোরশেদ আলম দ্রুতগতিতে মারুবিনির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে নেন।

শেয়ার করুন