হারার আতঙ্কে ডিসিসি নির্বাচন দিচ্ছেনা সরকার

0
152
Print Friendly, PDF & Email

মেয়াদোত্তীর্ণের ৭ বছরে ৫ বার প্রশাসক বদল
চরম ভরাডুবির আশঙ্কায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সরকার। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ স্থানীয়ভাবে কোণঠাসা। প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া দলটি এখন নির্বাচনী মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছে। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে পেশী শক্তি প্রয়োগের পরও নির্বাচনী ফলাফলে দলের নেতাকর্মীরা হতাশ। সহসা ডিসিসি নির্বাচন দিলে বিজয়ী হতে পারবে না ভেবে দলটি এখন মহানগর কমিটি গঠন নিয়েই বেশি ব্যস্ত।

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের সম্মেলন ও কমিটি গঠন না হওয়ায় আটকে আছে ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচন। দলের বিজয় নিশ্চিত করতে মহানগরের দুর্বল কমিটিগুলো ঢেলে সাজাচ্ছে আ’লীগ। আর সম্মেলন ও কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত যাতে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হয়, এজন্য দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রভাব খাটাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের দলীয়সূত্রে জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটি সর্বশেষ সভা হয়েছে। ঐ সভায় ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। আর সীমানা নিয়ে উদ্ভূত জটিলতা নিরসনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহসাই এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আব্দুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের জানান, সরকার এ মুহূর্তে ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না । কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে তিনি জানান।

সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ ২০০৭ সালের ১৪ মে উত্তীর্ণ হয়। ওই সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা না থাকায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হয়নি। পরবর্তীকালে ২০১১ সালের ২৯ নবেম্বর ডিসিসিকে উত্তর ও দক্ষিণ এ দুভাগে ভাগ করা হয়। এতে পদ হারান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ কাউন্সিলররা। সরকারি কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চলে যায় সিটি কর্পোরেশন। আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে ঢাকার এই দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও নির্বাচন হয়নি।

সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২৪ মে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এক রিট আবেদনের পরি প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই নির্বাচন স্থগিত হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলেও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা থেকে যায়। এরপর ৭ জুলাই ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে গত বছরের ৪ জুন তফসিল ঘোষণার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের আপত্তি ও সীমানা জটিলতার কারণে তা ঘোষণা করা হয়নি

এদিকে নির্বাচন না হওয়ায় প্রশাসক দিয়ে চলছে ডিসিসি। নির্বাচনী মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৭বছর কেটে গেছে। এরই মধ্যে ৫ দফা প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিন। তাই বারবার প্রশাসক বদল করতে হয়েছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ আলমগীরকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম শিকদারকে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।

এদিকে ডিসিসিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় ঢাকা নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রম ঠিকমতো চলছে না। নগরবাসী বলছেন, সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক সেবা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকছে রাজধানীর রাস্তায়। মশার দাপটে নগরবাসী অতিষ্ঠ হলেও মশা নিধনে ডিসিসি কোনো ভূমিকাই রাখছে না। আগে নগরীর অলিগলিতে মশার ওষুধ ছেটানো হতো। কিন্তু, এখন আর মশা নিধনে ডিসিসি’র তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

নগরীর সমস্যা সম্পর্কে ৪০নং ওয়ার্ডের (সাবেক ৭৬) কাউন্সিলর শাহাবুদ্দিন বলেন, আগে সব আমাদের হাতে ছিল। আমরা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। এখন এগুলো দেখেন প্রশাসকরা। তারা তো আর জনপ্রতিনিধি নন, জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এবং দায়িত্বশীল কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা মনে করেন, মূলত রাজনৈতিক কারণেই সরকার ডিসিসি নির্বাচন করছে না। গণমাধ্যমকে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর এখন আর নির্বাচন না করার কোনো কারণ নেই। আশা করব, সরকার ঢাকা সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদের নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, যথাসময়ে নির্বাচন না করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সবক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধির শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সেটাই গণতন্ত্র। তিনি বলেন, সরকারের সকল স্তরেও নির্বাচিত প্রতিনিধির শাসন জরুরি।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে তার দলের প্রস্তুতি আছে। আওয়ামী লীগ আন্দোলন-নির্বাচনের দল। দুটোতেই প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সীমানা জটিলতা নিরসন করলেই আমরা দ্রুত নির্বাচন করতে পারব। ইসি সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জটিলতা দূর হলেই ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

শেয়ার করুন