ভারত পানি সরিয়ে নেয়ায় ৩০ বছরে দেশের ৬০ ভাগ এলাকা মরুভূমি হবে

0
144
Print Friendly, PDF & Email

মৃতপ্রায় তিস্তা, মরুকরণের পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে পানি বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করে বলেছেন, ভারত একের পর ফারাক্কা, তিস্তার উজানে গজলডোবাসহ অভিন্ন নদীগুলোর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এভাবে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি সরিয়ে নিলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ৬০ ভাগ অঞ্চল মরুভূমি হয়ে পড়বে ।

গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রগতিশীল প্রকৌশলী ও স্থপতি ফোরাম এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ফোরামের আহ্বায়ক সুব্রত সরকারের সভাপতিত্বে আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, বুয়েটের পানি প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাব্বির মোস্তফা খান, এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, এডভোকেট কেএম হাফিজুল আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সেমিনারে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস আই খান বলেন, ভারত অভিন্ন নদীর উজানে যেসব বাঁধ দিয়েছে এবং দিচ্ছে, এর সবগুলো রাজনৈতিক বাঁধ। এর মাধ্যমে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, ধ্বংস করতে চায়।

তিনি বলেন, ভারত তিস্তা এলাকা থেকে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আমাদের পানিতে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, সেখানেও আমাদের সমান অধিকার রয়েছে। অথচ এই বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না।

এস আই খান মনে করেন, ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলা উচিত। কারণ, ওই বাঁধ বাংলাদেশ কেন, ভারতের এক টাকারও কাজে আসেনি। ভারতের পরিবেশেরও সীমাহীন ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

অভিন্ন নদীতে বাঁধ ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস কৃষি, মাছ, পশু, পাখি, গাছপালা যেভাবে মরে যাচ্ছে, এতে প্রতিবছর ১৩৫ বিলিয়ন টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এর জন্য আমরা আন্তর্জাতিক আদালতেও যেতে পারি।

পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার ও বাংলাদেশ সরকারের নতজানু নীতির কারণে শুধু তিস্তা নয় বাংলাদেশের বড় বড় আন্তর্জাতিক নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব ভয়াবহ।

তিনি তিস্তা বাঁধের পানি পেতে হলে সঠিক তথ্য তুলে ধরে আন্দোলন করতে হবে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত ন্যক্কারজনক কাজ করছে। তারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তিস্তা বাঁধ দেয়ায় বছরে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতির জন্য ভারতকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ তিনি বলেন, তুমি তো বাঙালি, তাহলে কেন তিস্তা চুক্তিতে বাধা দিয়েছ? বাংলাকে মরুভূমি করতে চাও?

সেমিনারে বক্তারা জানান, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও কনভেনশন লঙ্ঘন করে ভারত একতরফাভাবে উজানে বাংলাদেশের পানি সরিয়ে নেয়ার কারণে বাংলাদেশের নদীপ্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না এবং সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। ফলে বাংলাদেশে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং মরুকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কাজেই বাংলাদেশ এখন সাহারা মরুভূমির পথে।

‘হাওর অঞ্চলবাসী’র সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, নদী আন্দোলনে দেশের স্বার্থবিরোধী গোষ্ঠীরাও তৎপর রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে জনগণের অজ্ঞতা। জনগণের অজ্ঞতা কাটাতে তিনি দেশপ্রেমিক নকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

কে এম হাফিজুল আলম বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিশ্রুতি দুটোই লংঘন করছে। হেলসিংকি এবং আন্তর্জাতিক নদী আইন যেগুলো আছে সেখানে বাংলাদেশ সরকারকে আমাদের দাবি উপস্থাপন করতে হবে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জাতিসংঘের কনভেনশনে ৩৪টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। আর একটি দেশ স্বাক্ষর করলে এটি আইনে পরিণত হবে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বাংলাদেশকে এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে তিনি আহ্বান জানান।

সেমিনারে জানানো হয়, ৫৪টি নদীর অধিকাংশ নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত পানি সরিয়ে নিচ্ছে। তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ভারত নানা অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে। এটা গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

তারা বলেন, তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী। ভারত কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভেঙে উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহর করতে পারে না। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর প্রথম দায়িত্ব সরকারের।

উজানে ফারাক্কা ও তিস্তার বাঁধ ধ্বংস করে দেয়ার দাবি জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগে আমরা ১০ হাজার কিউসেক পানি তিস্তা থেকে ডাইভার্ট করে প্রজেক্টে নিয়ে যেতাম। এখন ৫০০-৭০০ কিউসেক পানি দিয়ে তলানিও ভরে না। ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করব, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে পদ্মার চরে তিস্তার ভাটিতে নামুন। তাকে দেখান পানি কোথায় আছে।

শেয়ার করুন